নিজস্ব প্রতিনিধি, পশ্চিম মেদিনীপুর: ফের মধ্যযুগীয় বর্বরতার সাক্ষী থাকল পশ্চিম মেদিনীপুর। ডাইনি সন্দেহে ৫০-ঊর্ধ্ব এক বিধবা আদিবাসী মহিলাকে গণপিটুনি দেওয়ার অভিযোগ উঠল গ্রামেরই কয়েকজনের বিরুদ্ধে। ঘটনার জেরে শনিবার রাত থেকে মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাঁচখুরি পঞ্চায়েতের সাতগেড়িয়া গ্রামে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের সদস্যদের সহযোগিতায় গুরুতর জখম অবস্থায় ওই মহিলাকে প্রথমে পাঁচখুরি গ্রামীণ হাসপাতালে ও পরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে সেখানেই তিনি চিকিত্সাধীন রয়েছেন। ঘটনায় শনিবার রাতেই মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় ১২জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। তাদের সকলকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিস।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাসখানেক আগে সাতগেড়িয়া গ্রামের এক বাসিন্দা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে গুনিনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই গুনিন জানান, গ্রামের মধ্যে কয়েকজন ডাইনি রয়েছে। যে কারণেই ওই ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গুনিনের কথা শুনে নড়েচড়ে বসে গ্রামের মাতব্বররা। সন্দেহের তির গিয়ে পড়ে গ্রামের চার মহিলার উপর। এরপর ওই চার মহিলাকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে মারধর করে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়। ঘটনার কথা জানাজানি হলে সামাজিকভাবে সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। যদিও তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। মাসখানেক ঘরছাড়া থাকার পর শনিবার ওই মহিলা গ্রামে ঢুকতেই তাঁর উপর চড়াও হন প্রায় ১২ জন। ওই মহিলাকে মাটিতে ফেলে চুলের মুঠি ধরে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। খবর পেয়ে ওই সংগঠনের সদস্যরা গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, নির্যাতিতার মাথায়, পিঠে ও বুকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।  
এদিন ওই নির্যাতিতা মহিলাকে দেখতে হাসপাতালে যান খড়গপুর গ্রামীণের বিধায়ক দিনেন রায় সহ তৃণমূল নেতারা। ঘটনা প্রসঙ্গে বিধায়ক বলেন, এধরনের সামাজিক ব্যধি দূর করার জন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। আগামী দিনে যাতে এধরনের ঘটনা না ঘটে, সেদিকে নজর রাখার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করব।