গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
হাঁটু সমান জল পেরিয়ে তবেই চড়াবাড় গার্লস হাইস্কুলে পৌঁছনো যাবে। এই স্কুলে কলাবেড়িয়া গ্রামের প্রশান্ত বেরা, পুষ্প বেরা, সুচড়াবাড় গ্রামের মৌমিতা দাস, চড়াবাড় গ্রামের কমলাকান্ত বেরা, লক্ষ্মী প্রধান প্রমুখ টানা এক মাস আশ্রয় নিয়েছেন। স্কুলের শৌচালয় জলের তলায়। দুর্গতরা টিন দিয়ে ঘিরে সেখানেই শৌচকর্ম করছেন। পানীয় জল সরবরাহের পাম্পও জলের তলায়। স্থানীয় বাসিন্দা পশুপতি মান্না নিজের বাড়িতে পাম্প চালিয়ে ওই স্কুলে আশ্রয় নেওয়া দুর্গতদের পানীয় জল সরবরাহ করছেন। প্রশান্তবাবু বলেন, এক মাস হয়ে গেল। এখনও বাড়িতে কোমর সমান জল। আর এক মুহূর্ত থাকতে ইচ্ছে করছে না। কবে এই যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাব জানি না।
ভগবানপুর-১ ব্লকের কোটবাড়, বিভীষণপুর, কাকড়া, বেঁউদিয়া, কাজলাগড়, মহম্মদপুর-১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫০টির বেশি গ্রাম এখনও পুরোপুরি জলের তলায়। কেলেঘাই নদীর বাঁধ সারালে জল নেমে যাবে বলে অনেকেই বলাবলি করছিলেন। গত ৬অক্টোবর রাতে কেলেঘাই নদীর বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জল ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছে সেচদপ্তর। তারপরও পরিস্থিতির সেভাবে উন্নতি হয়নি।এর মূল কারণ দু’টি। ভগবানপুর-১ ব্লক এলাকার জল নারায়ণদাঁড়ি-কলাবেড়িয়া খাল বেয়ে কালীনগরে রসুলপুর নদীতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু, সেই খালপাড় দখল করে শ’য়ে শ’য়ে দোকানঘর গজিয়ে উঠেছে। এছাড়াও মহম্মদপুর-১ ও ২, বিভীষণপুর ও কাকড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পরিকল্পনাহীন অজস্র ভেড়ি তৈরি হয়েছে। সেই কারণে নিকাশি ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ায় নদীবাঁধ মেরামতের দু’সপ্তাহ পরও জলযন্ত্রণা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না ভগবানপুরের মানুষ। এখনও অন্তত ৭০হাজার মানুষ জলবন্দি। কলাবেড়িয়া বাজার কমিটির সম্পাদক দেবব্রত মহাপাত্র ও ক্যাশিয়ার সুদীপ্ত রায় বলেন, এই বাজারে খালপাড় দখল করে অন্তত আড়াইশো দোকানঘর গজিয়ে উঠেছে। এখন লক্ষ মানুষের স্বার্থে দু’-আড়াইশো দোকানঘর ভেঙে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
ভগবানপুর-১ ব্লকের কাজলাগড়, কোটবাড়, কাকড়া এবং মহম্মদপুর-১ ও বিভীষণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এখনও জলের তলায়। একাধিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এখনও জলমগ্ন। বাজকুল-এগরা সড়কে যান চলাচল শুরু হলেও সাত-আট জায়গায় হাঁটু থেকে কোমর সমান জল ভেঙে যাতায়াত করতে হচ্ছে। মঙ্গলবার জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি কোটবাড় ও বিভীষণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বন্যা কবলিত এলাকা ভিজিটে গিয়ে গাড়ি ছেড়ে মিনি ট্রাকে চড়তে বাধ্য হন। জেলাশাসক বলেন, অনেক গ্রাম এখনও জলমগ্ন। নিম্নচাপের ফলে তিনদিনের বৃষ্টিতে পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হয়েছে।
ভগবানপুর-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ দাস বলেন, নদীপাড়ে দেদার ইটভাটা, যথেচ্ছ মাছের ভেড়ি ও খালপাড় দখল করে অজস্র দোকানঘর তৈরি হওয়ার কারণে নিকাশি ভেঙে পড়েছে। পুরোপুরি জল নামতে এখনও একমাস অপেক্ষা করতে হবে। এই জল যন্ত্রণায় ভগবানপুরের মানুষ তিতিবিরক্ত হয়ে পড়ছেন।