নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: নিম্নচাপের জেরে রবিবার থেকেই দীঘায় হলুদ সতর্কতা জারি হয়েছে। থানার নির্দেশে এদিন সকাল থেকেই সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়াররা অটোয় মাইক বেঁধে দীঘা উপকূলে সতর্কতা জারি থাকার কথা ঘোষণা করে। ভোররাত থেকে দুপুর পর্যন্ত অঝোরে বৃষ্টি হয়েছে। দুপুর দেড়টা নাগাদ বৃষ্টি থামতেই যাবতীয় সতর্কতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে পর্যটক সমুদ্রস্নানে নেমে পড়েন। কর্তব্যরত নুলিয়ারা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও সেসব কেউ পরোয়া করেননি। বৃষ্টি হলেও নিম্নচাপের প্রভাবে এদিন সেভাবে জলোচ্ছ্বাস হয়নি। সেই কারণে পর্যটকদের আটকে রাখা যায়নি। তবে, হলুদ সতর্কতার মধ্যেও শ’য়ে শ’য়ে পর্যটকের এভাবে সমুদ্রস্নান দেখে বিব্রত জেলা প্রশাসন।বঙ্গোপসাগরে ফের নিম্নচাপ ঘনীভূত হওয়ার ১৭থেকে ১৯অক্টোবর পর্যন্ত দীঘা উপকূল এলাকায় সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। রবিবার থেকেই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। সেইমতো এদিন কোনও মাছ ধরার ট্রলার সমুদ্রে নামেনি। সমুদ্রে মাছ শিকারে যাওয়া বেশকিছু ট্রলার এদিনও ফিরে এসেছে। সতর্কবার্তা অনুযায়ী মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে না নামলেও পর্যটকদের আটকানো যায়নি। সোম ও মঙ্গলবার আবহাওয়া খারাপ হলে সেক্ষেত্রে সমুদ্রস্নানে বাধা দেওয়া হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।রবিবার সকালে দীঘা থানার পুলিসের নির্দেশে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেও সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়াররা অটোয় মাইক বেঁধে ওল্ড দীঘার সি-হক ঘোলা ঘাটে যান। সেখানে স্নানে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মাইকিং করা হয়। কিন্তু, সেসব কোনও গুরুত্ব পায়নি। এদিন দীঘায় গিয়েছিলেন কাঁথির পিছাবনি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুভাষ সাহু, নন্দকুমারের আলাশুলি গোরাচাঁদ প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরূপকুমার ভৌমিক, চণ্ডীপুর ব্লকের কুলাপাড়া বোর্ড প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক রামকৃষ্ণ শীট প্রমুখ। তাঁরা বলেন, দীঘার ঘাটগুলিতে কাতারে কাতারে মানুষের ভিড় রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা নেই। হলুদ সতর্কতা নিয়েও কোনও ভয়ও কারও নেই।
আবহাওয়া দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী সোম ও মঙ্গলবার বজ্রবিদ্যুৎ সহ ভারীবৃষ্টি এবং ৪০-৫০কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জেলায়। তাতে সমুদ্র উত্তাল হতে পারে। যে কারণে দু’দিন হলুদ সতর্কতা জারি থাকছে উপকূলে। রবিবার উপকূল এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। জেলায় নানাপ্রান্তে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। পুজো মিটে যাওয়ার পর দীঘা এখন হাউসফুল। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমুদ্র সৈকতে আসছেন। তার জন্য পর্যটকদের সুরক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে।
জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপন অফিসার মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, ১৯তারিখ পর্যন্ত সতর্কতা জারি আছে। এই সময় পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। পাশাপাশি পর্যটকদেরও সমুদ্রে নামার উপর নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু, রবিবার প্রচুর সংখ্যক পর্যটক সমুদ্রে নেমেছেন। এদিন সেভাবে জলোচ্ছ্বাস ছিল না। পুজোর পর দীঘায় পর্যটকদের ঢল নেমেছে। নিষেধ না মেনেই অনেকেই সমুদ্রে নামেন।দীঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস বলেন, এদিন থেকেই মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে যাচ্ছেন না। ১৯তারিখ পর্যন্ত হলুদ সতর্কতা জারি আছে। তাই আপাতত তিনদিন মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে নামবেন না। ওল্ড দীঘায় কর্তব্যরত সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ার সৌমেন ঘোড়াই বলেন, ভোররাত থেকে বৃষ্টি চলছে। দুপুর নাগাদ বৃষ্টি থামতেই ভাটার সময় দল বেঁধে পর্যটকরা সমুদ্রে নেমে পড়েন। তাঁদের নিষেধ করা হলেও ভিড় আটকানো যায়নি। সোমবার এনিয়ে আমরা পুলিস ও প্রশাসনের নির্দেশ মেনে ব্যবস্থা নেব।