গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
মন্দিরের সেবায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, শাল পিয়ালের গভীর জঙ্গলের প্রাচীন শ্যামারূপা মন্দিরের পুজো প্রায় এক হাজার বছরের পুরনো। কথিত আছে, গৌর থেকে রাজা লক্ষণ সেন পালিয়ে এসে এই জঙ্গলে আত্মগোপন করেছিলেন। গভীর জঙ্গলে তিনিই প্রথম দুর্গাপূজা শুরু করেছিলেন। লক্ষণ সেন চলে যাওয়ার সময় মন্দিরের দায়িত্ব দেন রাজা ইচ্ছাই ঘোষকে। তিনিই ওই মন্দিরের সেবায়েত ছিলেন। স্বপ্নাদেশে দেবী দুর্গা ইচ্ছাই ঘোষকে অষ্টমীর দিন যুদ্ধে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু রাজা সপ্তমীর দিনই যুদ্ধে চলে যান। দেবীর কথা অমান্য করায় রাজা পরাজিত এবং নিহত হন। এই ঘটনার পরে রাজার অনুচরেরা দ্বীপসায়র নামে একটি জলাশয়ে দেবীর মূর্তি বিসর্জন করে দেন। পরে অষ্টধাতুর মূর্তি বসিয়ে ফের ওই মন্দিরে পুজো শুরু হয়। শোনা যায় একজন কপালিক সিদ্ধিলাভ করার জন্য ওই মন্দিরে নরবলি দিতেন। এই খবর পেয়ে কবি জয়দেব মন্দিরে উপস্থিত হন। তিনি কাপালিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাকে শর্ত দেন মায়ের দর্শন পেলে এই নরবলি বন্ধ করতে হবে। কবি জয়দেব প্রার্থনা করতেই দুর্গার মধ্যে শ্যামারূপ দেখতে পান। কাপালিকও মাকে দেখতে পেয়ে জয়দেবের পদতলে লুটিয়ে পড়েন। সেই থেকে বন্ধ হয়ে যায় নরবলি প্রথা। সেই সময়ের অষ্টধাতুর মূর্তিও একসময় চুরি হয়ে যায়। ফের পাথরের মূর্তিতে পূজো শুরু হয় শ্যামারূপা মায়ের। বর্ধমানের রাজা একসময় পুজো করতেন। আবার একটা সময় ওই পুজো বীরভূমের হেতমপুর রাজার অধীনে চলে যায়। সেই সময় থেকে তোপধনিব্বর শব্দে শ্যামারূপা মায়ের মন্দিরে এখনও শ্বেতছাগ বলি হয়। প্রাচীন রীতিনীতি মেনে পুজো এখনও হয়ে চলেছে।
বর্তমান সেবায়েত সন্তোষ রায় ও বাবু রায় বলেন, বিভিন্ন কারণে এক সময় দীর্ঘদিন ধরে ওই মন্দিরের পুজো বন্ধ ছিল। ফের পুজো শুরু হলে প্রায় ৪০ বছর আগে কেবল শশা বলি হতো। পরবর্তীকালে পুরাতন রীতিমতো ফের শ্বেতছাগ বলি শুরু হয়।
বর্তমানে মানুষের কোলাহলে অষ্টমীতে তোপধ্বনি শোনা না গেলেও এখনও বলি হয়। আমাদের বলিতে ভক্তদের উলুধ্বনি শঙ্খধ্বনি ও ঢাকঢোলের শব্দ শুনে বহু গ্রামে দুর্গাপুজোতে বলি দেওয়া হয়। এছাড়াও অন্য পুজোগুলি শ্যামারূপার মন্দিরের বলির পরে নিজেদের অষ্টমীর বলি দেয়। যেহেতু তোপধ্বনির শব্দ ক্ষীণ হয়ে এসেছে সেক্ষেত্রে তোপধ্বনি শোনার অপেক্ষায় থেকে ধৈর্য হারিয়ে ফেলে ভক্তগণ। তাই কয়েকবছর ধরে পঞ্জিকার সময় ধরে সন্ধিক্ষণে বলি দেওয়া হচ্ছে।
মন্দিরের বয়োজ্যেষ্ঠ সেবায়েত ভূতনাথ রায় ও দিলীপ রায় বলেন, কলকারখানা বেড়েছে। জঙ্গলের গভীরতাও কমেছে। এছাড়াও পুজোর সময় জঙ্গলে যানবাহন সহ গানবাজনায় শব্দ দূষণ হয়। ফলে তোপধ্বনি ক্ষীণ হয়েছে বর্তমানে। তাই আমরা শাস্ত্রমতে পঞ্জিকার সময় ক্ষন ধরেই গত কয়েক বছর ধরে ছাগবলি দিচ্ছি।
শ্যামারূপার ভক্ত তথা দুর্গাপুরের বাসিন্দা গণেশ সেন বলেন, পুজোতে গড়জঙ্গলে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয়। এছাড়াও শ্যামারূপা মন্দিরের পাশে একটি মন্দিরে গানবাজনা হয় বক্স ও মাইকে। ফলে পুজোর ঐতিহ্যবাহী তোপধ্বনি ক্ষীণ হয়েছে। সবাই মিলে যদি জঙ্গলের নিস্তব্ধতা বজায় রাখে তাহলে হয়তো সেবায়েতরা ফের তোপধ্বনি শুনতে পাবেন।