সংবাদদাতা, রামপুরহাট: প্রায় দু’বছর হতে চলল। করোনার জেরে বন্ধ স্কুল। ঘরবন্দি থেকে মানসিক যন্ত্রণায় দিন কাটছে পডুয়াদের। অনেকে আবার বইমুখীও হচ্ছে না। শিক্ষিকারাও নিয়মিত ভার্চুয়াল ক্লাস করছেন না। পড়ুয়া ও অভিভাবকদের কাছ থেকে এমনই নানান অভিযোগ পেয়ে রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ক্লাস রুম থেকেই ভার্চুয়াল পাঠদান চালু করার জন্য বললেন এলাকার বিধায়ক তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে এই স্কুলের ক্রমশ অবনমন নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। যার জেরে পড়াশুনোও শিকেয় উঠেছে। মহামারীর কারণে শুধু যে শিক্ষার ক্ষতি হচ্ছে তাই নয়, ব্যাহত হচ্ছে পড়ুয়াদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ। একটা বিরাট অংশের শিক্ষার্থীর বিদ্যালয় ছুটের সম্ভাবনা প্রকট হচ্ছে। বিশেষ করে সমাজের প্রান্তিক অংশের পড়ুয়ারা সংসারের হাল ধরতে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়ে পড়ছে। এমত অবস্থায় গত বছর রাজ্য সরকার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাড়ি থেকে ভার্চুয়াল ক্লাস করার নির্দেশ দিয়েছে। বাড়িতে বসে ওই ক্লাসের অংশীদার হবেন ছাত্রছাত্রীরা। প্রথম দিকে এই ধরনের ক্লাস সাড়া ফেললেও ক্রমশ তা ঝিমিয়ে পড়ছে। শিক্ষার মানের অবনমন ঘটছে অধিকাংশ স্কুলের। যেমনটা রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। একটা সময় রাজ্যের মেধা তালিকায় স্থান করে নিত এই স্কুল। সেখান থেকে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ। আশিসবাবু বলেন, অভিভাবক ও পডুয়ারা অভিযোগ করছেন ভার্চুয়াল ক্লাসের প্রস্তুতি নিয়ে পড়ুয়ারা বসে থাকলেও ক্লাস পাচ্ছে না। এমনকী ক্লাস যে নেবেন না সেটাও পড়ুয়াদের জানানো হচ্ছে না। তাই স্কুল থেকেই ভার্চুয়াল ক্লাস চালু করার জন্য কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে রামপুরহাট কলেজে তা চালু করা গিয়েছে। পাশাপাশি তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার অবনমন ঘটছে। অন্যান্য স্কুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই স্কুল যে এগিয়ে যাবে, সেব্যাপারেও উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। উল্লেখ্য, মাধ্যমিক ও একাদশের বার্ষিক পরীক্ষার ফলের উপর ভিত্তি করে এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হয়েছে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার খাতা না দেখেই নিজেদের মনগড়া নম্বর কাউন্সিলে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে ফলাফল ঘোষণার আগে উত্তাল হয় এই স্কুল। লাগাতার বিক্ষোভ দেখান উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। যার জেরে একাদশের পুনর্মূল্যায়ন করতে বাধ্য হয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেব্যাপারেও ক্ষোভ প্রকাশ করে বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার বলেন, এই স্কুলের পডুয়াদের ফল যাতে ভালো হয়, বা পড়ুয়াদের বিভিন্ন পরীক্ষায় খাতা দেখার ব্যাপারেও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
যদিও স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মল্লিকা হালদার বলেন, রামপুরহাটে নিজের উদ্যোগেই প্রথম শিক্ষিকাদের বাড়ি থেকে ভার্চুয়াল ক্লাস চালু করেছিলাম। কিন্তু ছাত্রীদের উপস্থিতির হার কম। তিনি বলেন, গত বছর বাড়ি থেকে ভার্চুয়াল ক্লাস করার সরকারি নির্দেশ ছিল। এবছর সেই নির্দেশ এখনও আসেনি। তবে ক্লাসরুম থেকে ভার্চুয়াল পাঠদান চালু হলে ভালো হয়। সেক্ষেত্রে হয়তো প্রথম এই স্কুলে চালু হবে। খুব শীঘ্রই শিক্ষিকাদের সঙ্গে এনিয়ে আলোচনা করব। কারণ, তাঁদের বিভিন্ন মতামত থাকতে পারে। শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই আশিসবাবুর এই উদ্যোগের প্রশংসা করছেন। যদিও অনেক দুঃস্থ ছাত্রীর বাড়িতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই। তারা চাইছে, কোভিড বিধিকে মান্যতা দিয়েই স্কুল খোলা হোক। আবার অনেকে চাইছে, অনলাইন ক্লাস করে করে বিরক্তি এসে গিয়েছে। কিছু বুঝতে না পারলে সব সময় বলতেও পারি না। সামনা সামনি ক্লাস করার অনেক সুবিধা।