বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য গৌরীশঙ্কর নারায়ণ দেও দাওয়ায় বসে বলছিলেন, রাজপরিবারের আদি পুরুষ জগন্নাথ দেব রাজস্থানের ঢোলপুর থেকে রাজত্ব স্থাপন করেন এখনকার সুপুরে। ৩২ পুরুষ সেখানে রাজত্ব চালানোর পর বিবাদের জেরে আলাদা হয়ে যান দুই ভাই টেকচাঁদ দেব ও খড়গেশ্বর। তাঁরা পৃথক হয়ে খাতড়া ও অম্বিকানগরে রাজধানী পত্তন করেন। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে মন্দির, রাজপ্রাসাদ। পূজিত হন কুলদেবতা কালাচাঁদ ও অম্বিকা। জনশ্রুতি আছে, মা অম্বিকা দেবীর নামেই হয় অম্বিকানগর। ১৬১১ সাল নাগাদ শুরু হয় দুর্গাপুজো। পুজোয় নানা রীতি মেনে চলে পরিবার। এবারও প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে গতিতে, নিয়ম মেনে। ষষ্ঠীর সময় যজ্ঞ হওয়ার পর কাঠের অঙ্গার থেকে তৈরি হয় কাজল। সেই কাজলে মায়ের চক্ষুদান করেন পুরোহিত। দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ এই রাজপরিবারের অহংকার। পুজোর সব দিনই চলে ছাগ বলি। মাটির হাঁড়িতে খিচুড়ি প্রসাদ করে বিলি হয়। তোপধ্বনির মাধ্যমে জানানো হয় পুজোর সন্ধিক্ষণ।
অম্বিকানগরের দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের আবেগ। রাজ পরিবারের অন্যতম সদস্য বিপ্লবী রাইচরণ ধবল দেব সরাসরি স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। ঘোড়ায় চেপে তিনি ঘুরতেন জঙ্গল পথে। ছেন্দাপাথরে তৈরি করেছিলেন গোপন গুহা। কথিত আছে, বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকি সেইসময় সেখানে আসতেন। গুহায় তৈরি হয়েছিল অস্ত্রগার। যদিও আন্দোলনের ফসল হিসেবে নিলামে চড়েছিল রাইচরণের রাজত্ব। তাঁর স্মৃতিতে তৈরি হয়েছে কমিটি। প্রত্যেক বছর মেলার আয়োজন হয় রাজবাড়ি সংলগ্ন মাঠে। সেখানেই প্রায় ৪০০বছর ধরে হয়ে আসছে দেবী দুর্গার আরাধনা।জানা গিয়েছে, রাজত্ব নেই বলে পুজো হতো সাদামাটা। হাল ভালো নয় পরিবারের সদস্যদের। তাই একসময়ের এলাকার প্রথম পুজোকে টিকিয়ে রাখতে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয়রাও। পরিবারের দাবি, এখন এই পুজো সর্বজনীন। পুজোয় খরচ হয় প্রায় তিন লক্ষ টাকা। তাই অনেকটাই স্বস্তি দেয় রাজ্য সরকারের অনুদান। গৌরীশঙ্করবাবু বলেন, রাজ্য সরকারের অনুদান প্রথম ১০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু হয়েছিল। তারপর ২৫ হাজার থেকে গত বছর পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা পেয়েছি। এবারও পাব। ফলে পুজোর খরচ সামলাতে কিছুটা হলেও ভরসা পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দা তথা উদ্যোক্তা সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, রাজবাড়ির পুজো এখন সবার। তাই গ্রামের বাসিন্দারাও সাহায্য করেন। রাজ্য সরকারের অনুদান পাওয়ায় পুজোর জৌলুস কিছুটা ধরে রাখা যাচ্ছে।