নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: ডান্স ট্রুপে কাজ করতে গিয়ে ভিনরাজ্যের যৌনপল্লিতে পাচার হয়ে যাচ্ছে বাংলার অভাবী পরিবারের নাবালিকারা। সম্প্রতি এমনই একটি সক্রিয় চক্রের হদিশ পেয়েছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার পুলিস। ভিনরাজ্যে নাচের অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হয় এখানকার মেয়েদের। কয়েকদিনের অনুষ্ঠানের বিনিময়ে মোটা টাকা রোজগার হবে, এই প্রলোভনে অভাবী পরিবারের অভিভাবকরাও মেয়েদের ছাড়তে রাজি হয়ে যান। স্থানীয় নাচের দলের ম্যানেজারের সঙ্গে যোগসাজশে ভিনরাজ্যে ডাক পড়ে এই নাবালিকাদের। একটি বা দুটি অনুষ্ঠান করলেই মোটা টাকার লোভে সেখানে যাওয়ার তাগিদও থাকে তাদের। এভাবেই তাদের ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের যৌনপল্লিতে। মেমারিতে নাবালিকা পাচারের ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের এমনই একটি চক্রের হদিশ পেয়েছে পুলিস। যোগীরাজ্যের এই পাচারচক্র জেলাজুড়ে কত নাবালিকাকে পাচার করেছে তার খোঁজ চালাচ্ছে পুলিস। রবিবার রাতে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করতে মেমারি থানার আটজনের দল উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে পাড়ি দিয়েছে। 
সম্প্রতি, নাবালিকা স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে বিহারে পাচারের অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে মেমারি থানার পুলিস। ধৃতের নাম রওসন শেখ ওরফে দীপ। নদীয়ার শান্তিপুর থানার রঘুনাথপুর স্ট্রিটের নতুনপাড়ায় তার আদি বাড়ি। বর্তমানে সে জামালপুর থানার কৃষ্ণরামপুরে থাকে। সেখান থেকেই বুধবার গভীর রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিস জানিয়েছে, মেমারি থানার ছোট মশাগড়িয়ায় বছর ষোলোর ওই ছাত্রীর বাড়ি। সে স্থানীয় স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। বছর দু’য়েক আগে সে কলকাতায় ডান্স করতে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয়। তারপর থেকে তার হদিশ মিলছে না। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিয়ে পরিবারের লোকজন জানতে পারে, রওসন ওই ছাত্রীকে বিহারের ছাপড়ায় একটি ডান্স গ্রুপে নাচার জন্য নিয়ে গিয়েছে। সেখানে নিয়ে গিয়ে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। ঘটনায় রওসনের মা ও ভাইও জড়িত বলে ছাত্রীর বাবার অভিযোগ। ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি মেমারি থানায় মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে খুঁজতে থাকে পুলিস। সম্প্রতি জামালপুরে তৃতীয় স্ত্রীর বাড়িতে আসেন রওসনের আগের দুই স্ত্রী। তাঁরা পুলিসের দ্বারস্থ হলে, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। 
পুলিসি জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত কবুল করেছে, ওই স্কুলছাত্রীকে উত্তরপ্রদেশে পাচার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। স্কুলছাত্রীকে উদ্ধারের জন্য ও ঘটনায় বাকি জড়িতদের হদিশ পেতে ধৃতকে ১০ দিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায় পুলিস। সেই আবেদন মঞ্জুর করেন সিজেএম। রওসনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইতিমধ্যে দুই মহিলার নাম পেয়েছে তদন্তকারী অফিসাররা। তারাই ভিনরাজ্যে মেয়ে পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত বলেই ধৃত জেরায় জানিয়েছে। তাদের সন্ধান করছে পুলিস। 
জেলা সদরের এসডিপিও (দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম খান বলেন, আমরা ওই নাবালিকাকে উদ্ধারের জন্য ইতিমধ্যেই একটি দলকে উত্তরপ্রদেশে পাঠিয়েছি। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা চলছে। জেরায় দুই মহিলার নাম সে উল্লেখ করেছে। তাদের হাত দিয়েই নাকি মেয়েদের উত্তরপ্রদেশে পাঠানো হতো। ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করা গেলে আরও কারা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত, কীভাবে তারা কাজ করে সমস্ত কিছু জানা যাবে।