কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
শুক্রবার দুপুর ১টা নাগাদ কেতুগ্রাম ১ ব্লকের আনখোনা পঞ্চায়েতের চাকটা গ্রামের বাসিন্দা অনুপ বন্দ্যোপাধ্যায় (৬০) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতেই মারা যান। তিনি ওই গ্রামের বিজেপির বুথ সভাপতি ছিলেন। মারা যাওয়ার পর এলাকায় অনেকেই মনে করেন তাঁর করোনায় মৃত্যু হয়েছে। এই আতঙ্কে অনুপবাবুর মৃতদেহ কেউ হাত দিচ্ছিলেন না। এমনকী গ্রামের বিজেপির কর্মী সমর্থকরা কেউই তাঁর মৃতদেহ দেখতে আসেনি। প্রত্যেকের ভয়, যদি কেউ আক্রান্ত হয়ে যান। যদিও অনুপবাবু করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নানা শারীরিক অসুখে ভুগছিলেন। এভাবে মৃতদেহ নিয়ে টালবাহানা চলে। এরপরেই সন্ধে নাগাদ তুমুল ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। সারারাত মৃতদেহ আগলে বসে ছিলেন মৃতের স্ত্রী রিনা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এদিন বলেন, আমার স্বামী অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর সবাই ভেবেছে, আমার স্বামীর করোনা হয়েছে। আদৌ তাঁর করোনা হয়নি। তবুও কেউ আমার স্বামীর মৃতদেহে কেউ হাত দেয়নি। তারপর তৃণমূলের ছেলেরাই আমার স্বামীর মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করে।
শনিবার সকালে আনখোনা পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী বুদুন শেখ ঘটনার কথা জানতে পারেন। তিনি তড়িঘড়ি এলাকার তৃণমূলের কর্মীদের নির্দেশ দেন। এরপর এদিন সকালে চাকটা গ্রামের তৃণমূলের কর্মীরা ওই বিজেপি নেতার মৃতদেহ কাঁধে করে শ্মশানে নিয়ে আসেন। তারপর উর্দ্ধারণপুর শ্মশানঘাটে বিজেপি নেতার মৃতদেহ যথাযথভাবেই সৎকার করেন।
এদিন উর্দ্ধারণপুর শ্মশানঘাটে দাঁড়িয়ে মৃতের এক জামাই দেবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, করোনা হয়নি। তাও বিজেপির কেউ মৃতের পাশে দাঁড়ায়নি। সবাই ভেবেছে হাত দিলেই বোধহয় আক্রান্ত হবে। কিন্তু গ্রামের তৃণমূলের ছেলেরা এসবের তোয়াক্কা না করেই এভাবে পাশে এসে দাঁড়াবে তা ভাবতে পারিনি।
এ বিষয়ে কাটোয়ার বিজেপি নেতা অনিল দত্ত বলেন, আমাদের কর্মীরা হয়তো ঘরছাড়া ছিল। তাই কেউ আসেনি। তবে পুরো বিষয়টা আমি খোঁজ নেব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অনুপবাবুর এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়েই সংসার। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এখন স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামেই থাকতেন তিনি। এদিন তাঁর মৃত্যুর পর গ্রামের বিজেপি কর্মীরা কেউই তাঁর খোঁজ না নেওয়ায় আক্ষেপ তাঁর পরিবারের। এলাকার তৃণমূল কর্মী চেতন দাস, খোকন দাস, হেলেন মাঝি বলেন, আমরা জানি উনি বিজেপি নেতা। কিন্তু তার আগে অনুপবাবু আমাদের গ্রামের বাসিন্দা। কেউ মৃতদেহের কাছে আসছে না দেখে আমরাই শ্মশানে নিয়ে যাই। কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহনেওয়াজ বলেন, আমরা দলের কর্মীদের এইভাবেই শিক্ষা দিই। তৃণমূলের কর্মীরা যে কতটা মানবিক, এর থেকেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়।