গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
সেই ‘সার্টিফিকেট’ অবশ্য মানতে চাইলেন না পাশের টেবিলে বসা আর এক ভদ্রলোক। তাঁর কথায়, ‘বুঝলেন দাদা, মানুষ এসব বেশিদিন মনে রাখেন না। এই তো সেদিন আমার এক পরিচিত ‘সবুজসাথী’র সাইকেলে চেপে বিজেপির সভায় যাচ্ছেন। জানতে চাইলাম, কেন এই বৈপরিত্য? উত্তরে বললেন, বেশ করেছি। সাইকেল চড়ছি বলে ভোট দিতে হবে, এমন মাথার দিব্যি কে দিয়েছে? তখন আমার মনে পড়ে গেল কলেজ-ভোটের কথা। ছাত্র পরিষদের হয়ে ভোট করিয়েছিলাম। ভোটের পর সবাইকে ডিমের ঝোল খাইয়েছিলাম। জিতেছিল এসএফআই। এবার যা বোঝার বুঝে নিন।’
‘বোঝার’ যেটা তা হল, তেহট্ট বিধানসভার খানিকটা মুসলিম অধ্যুষিত। গেরুয়া শিবিরের মেরুকরণ-অস্ত্র এখানে কিছুটা ভোঁতা। পাটিগণিতের সহজ সমীকরণে অনেকটাই এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী তাপস সাহা। তবে, একেবারে ফাঁকা মাঠে তিনি খেলছেন না। ফলে সহজে গোল দেওয়ার সুযোগ খুব একটা নেই। ডিফেন্সে ঢুকে গিয়েও যথেষ্ট ফাইট করতে হবে তাপসবাবুকে। এমনটাই বলছেন এলাকাবাসী।
তেহট্টের হাউলিয়া পার্ক মোড়ে কথা হচ্ছিল বিনয় সরকারের সঙ্গে। পাটের ছোট-খাটো ব্যবসা তাঁর। বললেন, ‘এখানে এবার বিজেপির প্রার্থী আশুতোষ পাল। এলাকার লোক তাঁকে বেশ ভালোই চেনেন। আবার সিপিএমের সুবোধ বিশ্বাসও পছন্দের মানুষ। ফলে, মুসলিম ভোটের পুরোটাই যে তৃণমূলের ঝুলিতে যাবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কের ভাগিদার তিন প্রার্থী। অর্থাৎ, আশার আলো দেখতে পাচ্ছে বিজেপি।’
কতটা আশার আলো? ‘বলতে পারেন, একদমই নেই।’—বলেই বিনয়বাবুর সঙ্গে একরকম তর্ক জুড়ে দিলেন তাঁরই বন্ধু। বললেন, ‘সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কে সামান্য থাবা হয়তো বসাতে পারে বিজেপি। কিন্তু এলাকায় ওদের ভাবমূর্তি একেবারে ভালো নয়।’ কারণ হিসেবে বিনয়বাবুকে উদ্দেশ্য করে তাঁর ব্যাখ্যা—‘গত পাঁচ বছর বিধায়ক ছিলেন গৌরীশঙ্কর দত্ত। গতবার ভোটের আগে তাঁর ছেলে এলাকায় কী করেছিল, ভুলে গেলি? লোকে এত সহজে সেসব ভুলে যাবে? ওরাই তো এখন বিজেপিতে। দলটা পচা মানুষে ভর্তি। এটা লোকে ভালো বুঝে গিয়েছে।’ আলোচনায় থাবা বসিয়ে অন্য আর একজন বলেই ফেললেন, ‘বিজেপি একটা মিথ্যেবাদীর দল। এখন বলছে, সরকার গড়লে রেশনে চাল না দিয়ে অ্যাকাউন্টে টাকা দেবে। গ্যাসের ভর্তুকির টাকাও অ্যাকাউন্টে দেবে বলেছিল। এখন সব ফক্কা। দলটাকে কেউ বিশ্বাস করে ভোট দেয়?’
তাহলে তেহট্টের ভোট-ভবিষ্যৎ? সবপক্ষই আশাবাদী। সিপিএম প্রার্থী সুবোধ বিশ্বাসের যুক্তি, ‘মুসলিমরা বিজেপিকে একটাও ভোট দেবেন না। আবার তাঁরা সবাই যে তৃণমূলকে ভোট দিবেন, এমন ভাববার কোনও কারণ নেই। তৃণমূলকে জেতালে প্রার্থী বিজেপিতে চলে যাবেন না, তার কী গ্যারেন্টি রয়েছে? এখন তো সেটাই স্টাইল। তাছাড়া এরাজ্যে বিজেপির বাড়বাড়ন্তের একমাত্র কারণ যে তৃণমূল, তা মুসলিমরা হাড়ে হাড়ে বুঝে গিয়েছেন।’ আর হিন্দু ভোট?
বিজেপি’র নদীয়া জেলার সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন অধিকারীর দাবি, ‘এবার ভোটে আমরা কিন্তু রামমন্দির ইস্যু নিয়ে লড়ছি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে মুসলিমদের নিয়ে মেরুকরণের রাজনীতিতে নেমেছেন, তাতে এমনিতেই হিন্দু ভোটারদের ৮৫ শতাংশ আমাদের পক্ষ নেবেন। এখানকার হিন্দু ভোটারদের ৬৫ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে এসেছেন। তাঁরা নিজেদের অধিকার ও নাগরিকত্বের জন্যই আমাদের পাশে থাকবেন।’
তৃণমূলের নদীয়া জেলার মুখপাত্র বাণীকুমার বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পাহাড়প্রমাণ উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের দু’টি সুবিধা রয়েছে। এক, গৌরীশঙ্কর দত্তের বিজেপিতে চলে যাওয়া। এতে দলের ভাবমূর্তি আরও ভাল হয়েছে। দুই, লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের যে ভোট গেরুয়া শিবিরে গিয়েছিল, তার অনেকটাই আমরা ফেরত পাব। মতুয়াদের একটা বড় অংশ আমাদের উপর ভরসা করছে। সবমিলিয়ে তেহট্ট বিধানসভায় আমাদের জয় সুনিশ্চিত।’
তবে, প্রাক্তন বিধায়কের সঙ্গে ছায়ার মতো ঘুরছে পড়শি পলাশীপাড়া।