সংবাদদাতা, সিউড়ি: মমতার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিবাদে বিজেপি ও কমিশনের বিরুদ্ধে সিউড়ি মহকুমাজুড়ে সরব হল তৃণমূল। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে প্রচার এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ততই জোরালো আক্রমণ শানাচ্ছে। আর সেই প্রচারে ইস্যু যদি হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাহলে তো কথাই নেই। মঙ্গলবার সিউড়ি মহকুমার বিভিন্ন বিধানসভায় বাড়ি বাড়ি প্রচারে গিয়ে বিজেপি ও কমিশনের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলছেন তৃণমূল প্রার্থী সহ নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।
মঙ্গলবার সিউড়ির তৃণমূল প্রার্থী বিকাশ রায়চৌধুরী আলুন্দা পঞ্চায়েতের কুখুদিহি, কখুরিয়া, ধললা সহ অনেকগুলি গ্রামে প্রচার করেন। এদিন তিনি তিলপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁশজোর, দুর্গাপুর, রামপুর, অজয়পুর, বারুইপুর সহ বেশ কয়েকটি গ্রামেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার সারেন। এই প্রচারের মাঝে কোথাও কোথাও তিনি ছোট ছোট পথসভা করে ভোটারদের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন। আর সেই বক্তব্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের প্রচার ব্যান করার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করা হয়। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারে যে দল নানা রকম সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করছে, যে দলের নেতারা বারবার ধর্মীয় ভাবাবেগকে ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করছে না নির্বাচন কমিশন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি সর্ব ধর্ম সমন্বয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে চলেন তাঁর উপর এহেন নির্দেশ মানুষ কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। বিজেপি যতই চেষ্টা করুক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ বন্ধ করলেও তাঁর সৈনিকদের মুখ বন্ধ করা সহজ নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন তখন বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশন বুঝতে পারবে যে তাঁর মুখ বন্ধ থাকলেও রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসতে পারে।
এদিকে সাঁইথিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী নীলাবতী সাহা নিজের এলাকায় বাড়ি বাড়ি প্রচার করেন। এদিন তিনি সাঁইথিয়া কেন্দ্রের মহম্মদ বাজার পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রচার করেন। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর নির্বাচন কমিশনের এহেন স্বৈরাচারী নির্দেশিকা ভোটারদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি এদিন ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ২৪ ঘণ্টার জন্য মুখ বন্ধ করে দিলেও তাঁর অনুগত সৈনিক হিসেবে আমরা মানুষের কাছে উন্নয়নের বার্তা তুলে ধরছি। সাধারণ ভোটাররাও কমিশনের সিদ্ধান্তের সমালোচনায় অনেক জায়গাতেই সরব হন। এদিন তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নানাভাবে আক্রমণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। কখনও ভিড়ের মধ্যে ধাক্কা মেরে তাঁর পা ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, কখনও দিল্লি থেকে আসা নেতারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রকাশ্য জনসভায় অপমান করছেন। কিন্তু বিজেপি কোনওভাবেই তাঁকে ঠেকিয়ে রাখতে পারছে না। তাই এখন নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে তাঁর মুখ বন্ধ রাখার চক্রান্ত করেছে।
এদিন দুবরাজপুরে তৃণমূল প্রার্থী দেবব্রত সাহা বাড়ি বাড়ি প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কমিশনের ভূমিকা ভোটারদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি কেন্দ্রগড়িয়া পঞ্চায়েতের সিমচুরি, বেলেডাঙা, মাটিয়ালা, ভীমগড়, নারায়ণপুরে বাড়ি বাড়ি প্রচার করেন। প্রচারে দলনেত্রীর বিরুদ্ধে কমিশনের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। এ সময় ভোটাররা প্রার্থীকে আশ্বস্ত করেন যে, ওরা যতই চেষ্টা করুক রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে না। মমতা তাঁদের জন্য যা করেছেন তা বিজেপি কোনও দিন করেনি। দেবব্রতবাবু বলেন, ভোটারদের যে প্রতিক্রিয়া পেলাম তাতে বিজেপি এই এলাকায় খাতা খুলতে পারবে কিনা সন্দেহ। এপ্রসঙ্গে বিজেপি নেতা অর্জুন সাহা বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের কাজ সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তাদের ভূমিকা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। আইন আইনের পথে এবং কমিশন নিজের পথে চলবে।