বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ফলাফলে আরামবাগ বিজেপির দিকে ঝুঁকেছিল। কিন্তু দুয়ারে সরকার কর্মসূচি তৃণমূলকে বেশ কিছুটা অক্সিজেন জোগায়। নির্বাচনের আগেই লড়াইয়ে ফেরে শাসক দল। ভোটের পর তৃণমূলের দলীয় স্তরে সমীক্ষার যে সব রিপোর্ট পেয়েছে তাতে নেতৃত্ব আশাবাদী। আরামবাগ নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, শাসক বিরোধী হাওয়ায় ২৫ শতাংশ, ধর্মীয় বিভাজন ও স্থানীয় ইস্যু নিয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ভোট বিরোধী শিবিরে যেতে পারে। বিরোধীদের মধ্যে অবশ্য বিজেপি ও সিপিএম দু’পক্ষই রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাকি ৫৫ শতাংশ ভোট উন্নয়নের সুফলের কারণেই নিশ্চিতভাবে তৃণমূলের দিকে পড়েছে।
আরামবাগে সুজাতা মণ্ডলের মতো লড়াকু নেত্রীকে দাঁড় করিয়ে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছে তৃণমূল। আরামবাগের বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা সহ অনান্য প্রবীণ নেতারাও প্রার্থীর পাশে দাঁড়ানোয় ও যুব কর্মী-সমর্থকরা জোট বেঁধে লড়াই করায় আরামবাগ কেন্দ্র নিয়ে অনেকটাই আশাবাদী তৃণমূল। ভোটের আগে ইস্তাহারে বাড়ির মহিলাদের ভাতা থেকে ছাত্রছাত্রীদের জন্য ১০লক্ষ টাকার ঋণ প্রকল্প, দুয়ারে রেশন প্রকল্পের প্রতিশ্রুতিতে বিজেপির ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রচার অনেকটাই ফিকে হয়েছে বলেই নেতৃত্বের দাবি। দুয়ারে সরকার ও পাড়ায় সমাধানের সুফল ভোটবাক্সে পড়েছে বলেই আত্মবিশ্বাসী শাসক দল। তবে এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী মধুসুদন বাগ ও সিপিএম প্রার্থী শক্তিমোহন মালিকও জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।
পুরশুড়ায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবকে প্রার্থী করায় এই আসনে লড়াই জমে যায়। এখানে বিজেপি প্রার্থী বিমান ঘোষকে তিনি কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। এলাকার সাধারণ মানুষ স্বীকার করছেন, দিলীপবাবু এই আসনে প্রার্থী হওয়ায় এখানে লড়াই ৫০-৫০।
খানাকুলে গত লোকসভা ভোটে ৮২হাজারের বেশি ভোট পায় বিজেপি। তৃণমূলের লিড ছিল ১৪ হাজার। এখানে তৃণমূল প্রার্থী মুন্সি নজিবুল করিমকে নির্বাচনের দিন মারধর করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও তিনি জিতবেন বলে নজিবুলের দাবি। তিনি বলেন, একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন ও হিন্দু-মুসলিম সকল স্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ভোটযুদ্ধে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে।
গোঘাট বিধানসভায় এবার লড়াই যে টাফ তা মানছেন তৃণমূল প্রার্থী মানস মজুমদারও। বিজেপির প্রার্থী বিশ্বনাথ কারক ফরোয়ার্ড ব্লক থেকে ২০১৮ সালে দলে যোগদান করেন। ফরোয়ার্ড ব্লকের টিকিটে গোঘাটের বিধায়কও হয়েছিলেন তিনি। পুরনো সংগঠনের জোর ও বিজেপির হাওয়া নিয়ে বিশ্বনাথবাবুও আশাবাদী। তবে, তাঁকে প্রার্থী করায় বিজেপির স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভের আঁচ যদি ইভিএমে পড়ে তাহলে গোঘাট আসনে ‘ফটো ফিনিস’ হবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
আরামবাগ মহাকুমার চারটি আসনে বিজেপির আদি কর্মীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাঁরা কী ভূমিকা পালন করেছেন, সেটা রীতিমতো চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিমান ঘোষ, মধুসূদন বাগ, সুশান্ত ঘোষদের বিরুদ্ধে আগেই প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন আদি কর্মীরা। পুরশুড়ায় চিরঞ্জিৎ বারিক, খানাকুলে চন্দন সামন্তর মতো আদি বিজেপি কর্মীরা নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁদের মানুষ কতটা সমর্থন করেছেন, সেটাই দেখার। যদিও পুরশুড়ার বিজেপি প্রার্থী বিমান ঘোষ ও গোঘাটের বিশ্বনাথ কারক বলেন, সব কর্মী থেকে নেতৃত্ব ভোটের ময়দানে পরিশ্রম করেছেন। চার আসনে আমাদের জয় নিশ্চিত।
আরামবাগ মহাকুমার চার বিধানসভার সংযুক্ত মোর্চার চার প্রার্থীও বুথওয়ারি সমীক্ষায় তাঁদের পুরনো জমি ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। রামে যাওয়া ভোট বামে ফিরলে অনেক অঙ্কই গোলমাল হয়ে যাবে।