কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
নীলকণ্ঠ চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের সদস্য রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ১৯৩৯ সালের ৯ ডিসেম্বর নেতাজি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তখন আমার বয়স মেরেকেটে ৮ বছর হবে। বর্তমানে আসানসোলে থাকি। বয়স ৯০ ছুঁইছুঁই। কিন্তু, নেতাজিকে দেখার স্মৃতি আজও চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে।
স্মৃতিমেদুর রঞ্জিৎবাবু বলেন, হাওড়া-চক্রধরপুর ট্রেনে চেপেই নেতাজি পুরুলিয়ায় এসেছিলেন। ওইদিন সকালে বাড়ির বিআরপি ১০১ নম্বরের গাড়িটি নিয়ে দাদু নীলকণ্ঠ চট্টোপাধ্যায় নেতাজিকে স্টেশনে আনতে যান।
হুডখোলা ওই গাড়িতে চেপেই নেতাজি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। বাড়ির চারিদিকে তখন থিকথিকে ভিড়। বাড়ির লোকজনই ভিড়ের চাপে ভিতরে ঢুকতে পারছিলেন না। বাড়ির ছাদ থেকে মহিলারা নেতাজির উপর পুষ্পবৃষ্টি করেন। নেতাজি নিজের মাথায় ফুল পড়তে দেখে খানিকটা অবাক হয়ে থমকে গিয়েছিলেন। থমকে ছাদের দিকে তাকিয়ে নমস্কার করেন। নেতাজির মতো মানুষের ওই নমস্কার জীবনে ভুলতে পারব না।
তিনি আরও বলেন, বৈঠক খানায় খানিকক্ষণ কথা বলে নেতাজি আমাদের বাড়ির ঠিক পিছনেই যে অতিথি নিবাস ছিল, সেখানে যান। উনি যা বলছিলেন তাঁর সেক্রেটারি সেই সব ডায়েরিতে লিখে রাখছিলেন। ওইদিন বাড়ির বারান্দায় মেঝেতে আসন পেতে তাঁর খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। বড় থালায় সব্জি, দু’টি রুটি এবং এক বাটি দুধ খেয়েছিলেন। সেই সময় আমার পিসতুতো দাদা নেতাজির শরীর পরীক্ষা করেন। তাঁর ১০২ জ্বর ছিল। ওইদিনই রাতের চক্রধরপুর হাওড়া ট্রেনেই ফিরে গিয়েছিলেন নেতাজি।
ওই পরিবারের সদস্য প্রদ্যুৎ চট্টোপাধ্যায়, রাজশেখর চট্টোপাধ্যায় বলেন, নেতাজির মতো মানুষ যে বাড়িতে বিশ্রাম নিয়েছিলেন, সেই বাড়ি আজ বেদখল হয়ে রয়েছে।
ঝোপ জঙ্গলে পূর্ণ। যেকোনও সময় বাড়িটা ভেঙে পড়বে। ওই বাড়িতে পুরুলিয়ায় এবং এই পরিবারের সঙ্গে নেতাজির স্মৃতি বিজড়িত সমস্ত সামগ্রী রাখতে চাই। যাতে অনেকেই আসতে পারেন। গবেষণা করতে পারেন।
ওই পরিবারেরই সদস্য পেশায় আইনজীবী রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ভাড়াটিয়ার কাছে অনেকবার বাড়ির চাবি চেয়েও পাইনি। এমনকী নেতাজির জন্মদিনে ওই বাড়িতে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতেও দেওয়া হয় না। আমাদের জেলার গর্বের ওই বাড়ি বেদখল হয়ে রয়েছে দেখে খুবই কষ্ট হয়।
পুরুলিয়ার ইতিহাসের গবেষক দিলীপ গোস্বামী বলেন, ওই বাড়িটি পুরুলিয়ার ইতিহাসের একটা অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। নেতাজির মতো মানুষ যেখানে এসেছিলেন সেই পবিত্রস্থানের জীর্ণ দশা আমাদের খুব কষ্ট দেয়। এবিষয়ে প্রশাসনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। জেলার ইতিহাসকে বাঁচাতে সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে।