সংবাদদাতা, রামপুরহাট: চোয়ালের ভিতরে ছোট্ট ক্ষত থেকে ক্যান্সার। তারপর ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়েছিল গলায়। জটিল অস্ত্রোপচার করে এক দিনমজুর প্রৌঢ়ার জীবন বাঁচালেন রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। শুধু তাই নয়, বিশেষ পদ্ধতিতে প্রৌঢ়ার বুকের মাংস নিয়ে চোয়াল পুনর্গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক সিদ্ধার্থ বিশ্বাস, ইএনটি চিকিৎসক সোহাগ কুণ্ডু, ডাঃ কোয়েল ভোয়াল, রুদ্রশঙ্কর দে, অ্যানাসথেটিস্ট অরূপ ঘোষ, সুপ্রিয় ভট্টাচার্য এই সফল অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোগিণীর অবস্থা স্থিতিশীল। খুব শীঘ্রই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হবে।
সুমতি লেটের বাড়ি রামপুরহাট থানার কাবিলপুর গ্রামে। খেতমজুরের কাজ করেই চলে সংসার। বেশ কয়েকমাস আগে তাঁর বাঁ দিকের চোয়ালের ভিতরে ছোট একটি ক্ষত দেখা যায়। অ্যালোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক দেখিয়েও তা সারছিল না। উল্টে দিন দিন তা বেড়েই চলছিল। খাওয়া-দাওয়া করতেও তাঁর অসুবিধা হচ্ছিল। মাসখানেক আগে পরিবারের সদস্যরা রামপুরহাট মেডিক্যালের শল্য চিকিৎসক সিদ্ধার্থ বিশ্বাসকে তিনি দেখান। চিকিৎসকের সন্দেহ হওয়ায় বায়োপসি করতে বলা হয়। তাতেই ধরা পড়ে ক্যান্সার। রোগীকে বাঁচানোর জন্য দ্রুত অপারেশন করার দরকার হয়। কিন্তু, বাইরে অপারেশন করানোর মতো আর্থিক ক্ষমতা যে তাঁদের নেই সেকথা সুমতিদেবী জানিয়ে দেন। তারপর রামপুরহাট মেডিক্যালেই ওই রোগিণীর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসক।
বুধবার দুপুরে মেডিক্যালের সার্জারি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে রোগিণীর অস্ত্রোপচার হয়। সাড়ে পাঁচঘন্টা ধরে চলে অপারেশন। সিদ্ধার্থবাবু বলেন, এধরনের অপারেশন প্রাইভেটে করালে খরচ অনেক। পরিবারটি অত্যন্ত দুঃস্থ। এদিকে অস্ত্রোপচার না করলে রোগিণী মারা যেতে পারতেন। এই পরিস্থিতিতে মেডিক্যালেই অপারেশন করি। তিনি বলেন, এধরনের অস্ত্রোপচারকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয়, ‘মোডিফায়েড র‌্যাডিক্যাল নেক ডিসেকশন’। চোয়াল এবং গলার ক্যান্সারের অংশ কেটে বাদ দিয়ে ‘পেক্টোরালিস মেজর মাইয়োক্যুটেনিয়াস ফ্ল্যাপ’ পদ্ধতিতে বুকের মাংস নিয়ে চোয়াল পুনর্গঠন করা হয়। এই অপারেশন বেশ জটিল ছিল। তবে, আমরা সাফল্য পেয়েছি। আপাতত রোগিণীকে সিসিইউ বিভাগে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি পলাশ দাস বলেন, মেডিক্যালের প্রফেসার সিদ্ধার্থ বিশ্বাসের প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। ভবিষ্যতেও এধরনের জটিল অস্ত্রোপচার যাতে হয় সেই বিষয়েও আমরা উদ্যোগী হব।
রোগিণীর মেয়ে দীপালি লেট ও ছেলে অনিল লেট বলেন, মায়ের চোয়ালে ঘায়ের মতো হয়েছিল। ডাক্তারবাবুরা জানিয়ে ছিলেন, সেই ঘা থেকেই ক্যান্সার হয়ে যায়। মাকে বাঁচাতে গেলে অপারেশন করতে হবে। কিন্তু, তারজন্য অনেক খরচ। আমরা দিনমজুরি করে সংসার চালাই। এত বড় অসুখের চিকিৎসার খরচ সামলানো আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পরিষেবা দেওয়া হয় বলেই মাকে বাঁচানো গেল। তা না হলে কী যে হতো তা ঈশ্বরই জানে।