পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
চার দিদির পর ভাই। বাবা সামান্য এক ওষুধের দোকানের কর্মচারী। সেই সময় রোজগার ছিল মাত্র পাঁচশো টাকা। নিজে কোনওদিন নতুন বই খাতায় পড়ার সুযোগ পাননি। নতুন জামা পরে স্কুলে যাওয়া তো ছিল স্বপ্ন। অভাবকে সঙ্গী করেই বেড়ে ওঠা দীপনারায়ণবাবুর। খনি অঞ্চলে কাঁচা টাকা উড়ে বেড়ায়। শহরের চাকচিক্য দেখে ভেবেছিলেন তাঁরই বোধহয় একমাত্র এই করুণ দশা। ভুল ভাঙল শিক্ষকতার চাকরি পেয়ে। জামুড়িয়া থানার জবা শিমুলিয়া গ্রামের তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুবাদে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয় দরিদ্র আদিবাসী পরিবারগুলির। সেই থেকে শপথ নেন, যতটা পারবেন তাঁদের পাশে থাকবেন। এরই মাঝে আসে করোনার প্রকোপ। লকডাউনের জেরে অদিবাসী পরিবারগুলি তখন অন্ন সংস্থান করাই কষ্টকর হয়ে পড়ে। দীপনারায়ণবাবু সেই পরিস্থিতিতেও বহু চেষ্টা করে পড়ুয়াদের পড়াশোনায় ছেদ পড়তে দেননি। আদিবাসী পাড়ার মাটির রাস্তায় বসে ওই পাঠাশালা। কিন্তু খালি পেটে কী আর পেটে বিদ্যা ঢোকে। তাই পড়ুয়াদের জন্য খাবারও আনতেন তিনি। পড়ুয়াদের পর ওই আদিবাসী গ্রামের নিরক্ষর অভিভাবকদেরও পড়াশোনা শেখানোর উদ্যোগ নেন। এমন মানবদরদী মাস্টারের বিয়েতে যে চমক থাকবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নিজের বউভাতের দিন বাস ভাড়া করে জবা শিমুলিয়া থেকে পড়ুয়াদের আসার ব্যবস্থা করেন। নবদম্পতির পরিবেশন করা খাবার তারা খায়। এরপর স্লেট, পেনসিল সহ পড়ুয়াদের দেওয়া হয় ব্যাগ। ৪০, ৫০ বছর বয়সে সাক্ষর হওয়া গ্রামের মহিলা অভিভাবকদের একটি করে শাড়িও উপহার দেন তিনি। তবে বউভাতের অনুষ্ঠান স্মরণীয় হয়ে থাকে যখন তিনি ঘোষণা করেন, সুরিয়া, পূজা, অশ্মিনীর মতো অনাথ, দুঃস্থ শিশুদের আজীবন পড়ার ভার নেবেন নবদম্পতি। কে এই সুরিয়া? নিয়ামতপুরের সুরিয়ার যখন তিন বছর বয়স, কুকুরের কামড়ে মৃত্যু হয় তার মায়ের। অভাব ও অপুষ্টির জেরে মারা যান বাবাও। এরপর এক আত্মীয় তাকে জমা শিমুলিয়া গ্রামে আনে। সেই থেকেই দীপনারায়ণবাবুর নজরে আসে। একইভাবে পুজা টুডু আর অস্মিনী, দুই বোনের বাবা মারা গিয়েছেন। পড়া ছেড়ে লোকের বাড়িতে বাসন ধোয়ার কাজ করবে বলে ঠিক করেছিল। তাদেরও মাথার ছাতা হয়ে দাঁড়ালেন সস্ত্রীক রাস্তার মাস্টার। নিজস্ব চিত্র