সংবাদদাতা, লালবাগ: ভগবানগোলা-১ ব্লকের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা একশো দিনের কাজের প্রকল্পে নার্সারি গড়ে বৃক্ষ এবং ফল গাছের চারা তৈরি করছেন। ইতিমধ্যে গোষ্ঠীর মহিলারা স্থানীয় পঞ্চায়েতের পাশাপাশি খোলা বাজারেও চারাগাছ বিক্রি শুরু করেছেন। নার্সারির মাধ্যমে গ্রামের দুঃস্থ পরিবারের মহিলাদের একশো দিনের কাজের প্রকল্পে যুক্ত করায় তারা একদিকে যেমন রাজ্য সরকারের নির্ধারিত পারিশ্রমিক পাচ্ছেন, অন্যদিকে চারাগাছ বিক্রি করে হাতে লাভের টাকাও পাচ্ছেন। ফলে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ব্লক প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পঞ্চায়েত ভিত্তিক নার্সারি গড়ে তোলায় আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরছে গ্রামের দুঃস্থ পরিবারগুলিতে। মাসের শেষে অর্থাগম হওয়ায় ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচের পাশাপাশি সংসারের হালও ধরছেন মহিলারা। তাঁরা বলেন, রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের মহিলাদের অর্থ উপার্জনের সুযোগ করে দিয়েছে। 
ভগবানগোলা-১ ব্লকে তিন হাজারের বেশি মহিলা পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। প্রতি গোষ্ঠীতে ১০-১২ জন সদস্য হিসেবে মোট প্রায় ৩৫ হাজার মহিলা গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে গোষ্ঠীর মহিলাদের অর্থ উপার্জন হয়ে থাকে। ব্লক সূত্রে জানা গিয়েছে , মাশরুম চাষ, মুরগির পোলট্রি , ছাগল পালন, স্কুল ড্রেস তৈরি, ডালের বড়ি, আসন, ব্যাগ প্রভৃতি কাজ বিগত কয়েক বছর ধরে গোষ্ঠীর মহিলারা করে আসছেন। বছর দুয়েক আগে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে মহিলাদের যুক্ত করতে নার্সারি গড়ে বৃক্ষ ও ফলের চারাগাছ তৈরির কাজ শুরু হয়। নার্সারি গড়ে তোলার জন্য ব্লকের উদ্যানপালন বিভাগ থেকে মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তা এবং উদ্যান পালন বিভাগের আধিকারিকদের তত্ত্বাবধানে নার্সারি গড়ে চারাগাছ তৈরির কাজ শুরু হয়। এই নার্সারিগুলিতে শাল, সেগুন, মেহগনি, সোনাঝুরি প্রভৃতি বৃক্ষজাতীয় গাছের পাশাপাশি পেয়ারা, আতা, চালতা, আমলকি প্রভৃতি ফল গাছের চারা তৈরি করা হচ্ছে। ৩ নম্বর ভগবানগোলা পঞ্চায়েতের কাশীপুর গ্রামের গোষ্ঠীর মহিলারা নার্সারি গড়ে গাছের চারা তৈরি করছেন। কাশীপুর গোষ্ঠীর রঞ্জিতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, নার্সারিতে তৈরি বৃক্ষ ও ফলের গাছগুলি স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং খোলা বাজারেও বিক্রি করা হয়। তবে এই জাতীয় গাছের চারার খোলা বাজারে বিক্রি একেবারেই কম। অনেক সময় পঞ্চায়েতের অর্ডার কম থাকলে চারাগাছ থেকে যায়। সেক্ষেত্রে বাকিগুলি বিক্রি না হলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। গোষ্ঠীর অপর এক সদস্যা বর্ণালী দাস বলেন, চলতি বছরে করোনার জেরে পঞ্চায়েত এবং স্থানীয় প্রশাসনের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। ফলে চারাগাছগুলি একবছর ধরে নার্সারিতেই রয়ে গিয়েছে। এই চারাগুলি বিক্রি না হলে নতুন করে চারাগাছ তৈরি করা যাচ্ছে না। ভগবানগোলা-১ বিডিও পুলককান্তি মজুমদার বলেন, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে মহিলারা যুক্ত হয়ে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন এবং চারাগাছ বিক্রি করেও যে লাভ হচ্ছে, তা থেকে গোষ্ঠীর সদস্যরা লাভের একটা অংশ পাচ্ছেন। সরকারি আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি গোষ্ঠীগুলিকে জাগো প্রকল্পে পাঁচ হাজার টাকা করে বাৎসরিক অনুদান দেওয়া হয়। করোনা কালে গোষ্ঠীর মহিলারা মাস্ক তৈরি করছেন। এখানকার গোষ্ঠীর মহিলাদের তৈরি মাস্ক ইতিমধ্যেই জেলা ও রাজ্যে স্তরে পাঠানো হয়েছে।