নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্য সংস্কার এবং কিছু ক্ষেত্রে উন্নয়নের কাজে বরাদ্দ হল প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা। যত দ্রুত সম্ভব বেশকিছু কাজে হাত দেওয়া হবে বলেই জানা গিয়েছে। অভয়ারণ্যের পরিকাঠামো আরও ভালো করা হবে। উম-পুনে নষ্ট হয়ে যাওয়া কিছু সিসিটিভির মেরামতি হবে। আরও কিছু সিসি ক্যামেরা কেনা হবে বলেই দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। বনদপ্তরের এক কর্তা বলেন, ভিড় সামলাতে অভয়ারণ্যের পরিকাঠামো আরও ভালো করা হচ্ছে। নজরদারি বাড়াতে গতবছর কিছু সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। নজরদারি বাড়ানো, সেই সঙ্গে জঙ্গলের প্রাণীদের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করা হয় ক্যামেরার মাধ্যমে। বনদপ্তর সূত্রে খবর, প্রাথমিকভাবে কিছু ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। ধাপে ধাপে আরও কয়েকটি ক্যামেরা বসানো হবে। বেশ কয়েকবছর আগে এই অভয়ারণ্যে পর্যটকদের তাড়া খেয়ে দু’টি হরিণের মৃত্যু হয়েছিল। অভয়ারণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তারপর বেশকিছু পরিকল্পনা নেওয়া হলেও সেভাবে কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। অবশেষে নিরাপত্তা এবং পরিকাঠামো বাড়াতে বেশকিছু ব্যবস্থা নিতে চলেছে বনদপ্তর। বনদপ্তরের এক কর্তা বলেন, সিসিটিভি থাকলে এমনিতেই অনেক সুবিধা হয়। পাশাপাশি জঙ্গল রক্ষা এবং বন্যপ্রাণ রক্ষাও অনেকটাই সুবিধা হবে। কিছু জায়গায় বেড়া দেওয়ার কাজ, বৈদ্যুতিক কাজ, কটেজের কাজও করা হবে। কী কী কাজ হবে তা শীঘ্রই একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প বিবরণী করা হবে। নদীয়া-মুর্শিদাবাদের(ভিভিশন) ডিএফও প্রদীপ বাউরি বলেন, অভয়ারণ্য আরও ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের কাজে ৬৫লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এই টাকায় কিছু উন্নয়ন সঙ্গে নিরাপত্তাও আঁটসাঁট করা হবে। অভয়ারণ্য হলেও এটি মূলত হরিণ সংরক্ষণ কেন্দ্র। প্রবেশদ্বার থেকে বাঁধানো পথ ধরে এগিয়ে গেলেই পৌঁছনো যাবে জঙ্গলের গভীরে। হাজারও পাখির কলকাকলি স্বাগত জানাবে। ডানদিকে রয়েছে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় নেচার ইন্টারপ্ৰিটেশন সেন্টার। এখানে রয়েছে নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলির ক্ষুদ্র সংস্করণ। যেমন-কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি, কৃত্তিবাস স্মৃতিতোরণ, মুর্শিদাবাদের কাটরা মসজিদ, হাজারদুয়ারি প্যালেস ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন মৃত জীবজন্তু ও তাদের ডিমের সংরক্ষণ। এই সেন্টারের সংস্কারও হবে এই টাকায়।
২০১১সালের সেপ্টেম্বর মাসে ছুটির দিনে ৬৭হেক্টর অভয়ারণ্যে পর্যটকদের ঢল নেমেছিল। কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। দিনান্তে একটি হরিণের মৃত্যু হয়। একটি হরিণের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ইটের ঘায়ে আরও বেশকিছু হরিণ ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল। মদ্যপ অবস্থায় বহু পর্যটক তাণ্ডব চালিয়েছিল। আরও বেশকিছু প্রাণীও জখম হয়েছিল। তারপর থেকেই কিছুটা কড়াকড়ি শুরু করে বনদপ্তর। অবাধে ঘোরাঘুরির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। গাইড সহ জঙ্গল ঘুরিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। মদ্যপ অবস্থায় জঙ্গলে ঢোকার ক্ষেত্রেও রাশ টানা হয়। বাড়ানো হয় নজরদারিও। এখানে প্রায় ১৫০টি প্রজাতির পাখি রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে আগের চেয়ে ভিড় কমলেও শীতের মরশুমে ভিড়ের আশায় রয়েছে বনদপ্তর।