নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক ও মেদিনীপুর: বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকে সাধারণ ধর্মঘটে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় মিশ্র প্রভাব পড়ল। তিন জেলায় কোনও বেসরকারি বাস চলাচল করেনি। কয়েকটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে। ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন জাগগায় ধর্মঘটীদের সঙ্গে পুলিসের গোলমাল বেধেছে। খড়্গপুর শহরের কয়েকটি জায়গায় গণ্ডগোলের ঘটনায় ৩২জন ধর্মঘটীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৫৫জন। সকাল থেকে ধর্মঘটের সমর্থনে তিন জেলার বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ শুরু হয়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় জোর করে দোকানপাট বন্ধ করার অভিযোগে মোট ২৯জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সকাল থেকেই এদিন রাস্তায় যানবাহন কম ছিল। ধর্মঘটীরা শপিং মল থেকে ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস প্রভৃতি গেটে ঝাণ্ডা বেঁধে দেয়। ধর্মঘটের সমর্থনে তিন জেলার বিভিন্ন জায়গায় মিছিল বের হয়। আইনজীবীরা কাজ না করায় আদালতে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়।
এদিন সকালে পাঁশকুড়ার মেচগ্রামে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বামেরা। কোলাঘাটের দেউলিয়ায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করে এসইউসির শ্রমিক ও কৃষক সংগঠন। তমলুক শহরে নিমতৌড়িতে ৪১নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন ধর্মঘটীরা। সকালে ধর্মঘটের সমর্থনে নন্দীগ্রামে বাইক র‌্যালি করা হয়। হলদিয়ার ব্রজলালচকে ধর্মঘট সমর্থনকারীরা মারাদোনাকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানান। কাঁথি শহরে ধর্মঘটের সমর্থনে বামেরা বড় মিছিল বের করে। মেচেদা বাইপাস এলাকায় পথ অবরোধ চলাকালীন পুলিসের সঙ্গে ধর্মঘটীদের ধস্তাধস্তি হয়। তাতে সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায়। সকালে তমলুক শহরে মিছিল বের হয়। মানিকতলা মোড়ে পথ অবরোধও করা হয়। যদিও বিপরীত লেন ফাঁকা থাকায় যান চলাচল বিঘ্নিত হয়নি। দেশপ্রাণ স্টেশনে রেল অবরোধ করা হয়। তাতে একটি লোকাল ট্রেন কিছুক্ষণ থমকে ছিল। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে কাজকর্ম প্রায় স্বাভাবিক ছিল।
মেদিনীপুর শহরে ধর্মা এলাকায় রাস্তায় উপর টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধে শামিল হন ধর্মঘটীরা। শহরের এলআইসি মোড়ে পুলিসের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মঘটের সমর্থনে পিকেটিং করা হয়। জেলাশাসকের অফিসের সামনে ফাঁকা জায়গায় ক্রিকেট খেলে ধর্মঘটীরা স্লোগান দেন। রাস্তায় সরকারি বাস ছিল। তাতে যাত্রী সংখ্যা ভালোই ছিল। খড়্গপুর শহরে মালঞ্চ, ইন্দা, প্রেমবাজার ও আইআইটি এলাকায় ধর্মঘটীদের সঙ্গে পুলিসের ধস্তাধস্তি হয়। খড়্গপুর শিল্পাঞ্চলে কাজকর্ম মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল।
ধর্মঘট ঘিরে তিন জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা ছিল ঝাড়গ্রামে। ওই জেলায় দোকানপাট, হাটবাজার একেবারে স্তব্ধ ছিল। রাস্তায় সেভাবে যান চলাচল করেনি। সকালে ঝাড়গ্রাম স্টেশনে হাওড়াগামী স্টিল এক্সপ্রেস আটকে স্লোগান দেন ধর্মঘটীরা। ৩৫মিনিট থমকে ছিল ট্রেন। পুরাতন ঝাড়গ্রামে একটি পেট্রলপাম্পে প্রায় হাজার টাকা মূল্যের পেট্রল ভরার পর ধর্মঘটীদের বেশ কয়েকটি বাইক পেমেন্ট না করেই বেরিয়ে যায়। পেট্রল পাম্পের কর্মীরা পিছু পিছু ছুটেও নিরাশ হন। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনা হয়। কিছুক্ষণ পর গোটা জেলা সদর শহরে পেট্রলপাম্প বন্ধ করে দেওয়া হয়। লালগড় থানার বৈতা গ্রামে ধর্মঘটী এক মহিলার উপর পুলিসের লাঠি চালানোর অভিযোগকে ঘিরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। সিপিএমের জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে ঘটনাস্থলে যান। শুরু হয় অবরোধ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ঝাড়গ্রামের এসডিপিও অনিন্দ্যসুন্দর ভট্টাচার্য। ঝাড়গ্রাম শহরে হেডপোস্ট অফিসে ধর্মঘটীরা শাটার নামানোর সময় এক অস্থায়ী কর্মী মাথায় গুরুতর আঘাত পান। তাতে উত্তেজনা ছড়ায়। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গোপীবল্লভপুর থেকে বিনপুর, বেলপাহাড়ি সর্বত্রই ছিল শুনশান।  নিজস্ব চিত্র