কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
ময়ূরেশ্বরের ঘোষগ্রাম বর্তমানে লক্ষ্মীগ্রাম হিসেবে পরিচিত। এই গ্রামে বাড়ি-বাড়ি লক্ষ্মীপুজোর চল নেই। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রতিষ্ঠিত মন্দিরের দারুমূর্তির মা লক্ষ্মী গ্রামের আরাধ্য দেবী। প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে এই মূর্তিতেই লক্ষ্মীপুজো হয়ে আসছে। আজ, শুক্রবার হাজার-হাজার মানুষের ঢল নামবে এই লক্ষ্মীগ্রামে। তবে, এবার করোনা আবহের কারণে গর্ভগৃহে প্রবেশ করে ভক্তদের পুজো দেওয়া নিষিদ্ধ করেছে মন্দির কমিটি।
জনশ্রুতি আছে, হর্ষবর্ধনের আমলে পরিব্রাজক সাধক কামদেব ব্রহ্মচারী মায়ের সাধনার আসনের সন্ধানে পরিভ্রমণ করছিলেন। বীরভূমের রাঢ় অঞ্চল ঘুরতে ঘুরতে তিনি ঘোষগ্রামে এসে পৌঁছন। রাত হয়ে যাওয়ায় তিনি একটি নিমগাছের নীচে ঘুমিয়ে পড়েন। সেখানে তিনি স্বপ্ন দেখেন ত্রেতাযুগে রাম, লক্ষ্মণ, সীতা ও হনুমান বনবাসের জন্য কিছুদিন এই গ্রামে বিচরণ করে গিয়েছেন। আবার দুর্যোধনের চক্রান্তের শিকার হয়ে পাণ্ডবরা কিছুদিন এই এলাকায় অজ্ঞাতবাসে ছিলেন। এরপরই নিমগাছের নীচে সাধনা শুরু করেন। দীর্ঘদিন কঠোর সাধনার পর তিনি লক্ষ্মীর স্বপ্নাদেশ পান। মা তাঁকে স্বপ্ন দিয়ে বলেন, এই নিমগাছের তলাতেই আমার দারুময়ী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজোর ব্যবস্থা কর। তোকে সাহায্য করবে গ্রামের দয়াল ঘোষ। এরপরই দয়াল একদিন কৃষিকাজের জন্য ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে যান। সেই সময় গ্রামের কাঁদরে একটি শ্বেতপদ্ম ভাসতে দেখে সেটা নেওয়ার জন্য ছেলে বায়না ধরে। দয়াল কাঁদরের জলে নেমে পদ্মফুলটি তুলতে গেলে সেটি সরে যায়। ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান দয়াল। রাতে স্বপ্নাদেশ পান, কোনও সাধক পুরুষ শ্বেতপদ্মটি তুলতে পারবেন। দয়াল ছুটে যান কামদেব ব্রহ্মচারীর কাছে। এরপরই কাঁদর থেকে শ্বেতপদ্ম ও একটি কাঠের খণ্ড তুলে নিয়ে এসে গঙ্গামাটির প্রলেপ দিয়ে লক্ষ্মীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে পুজোর শুরু করেন। সেদিন ছিল কোজাগরী পূর্ণিমা তিথি। সেই থেকে গ্রামে আরাধ্য দেবী রূপে পূজিতা হয়ে আসছেন মা লক্ষ্মী। তাই কোনও বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো হয় না। সকলে আরাধ্য দেবীর আরাধনায় মেতে ওঠেন। লাগোয়া মুর্শিদাবাদের বহু গ্রামের মানুষ এই গ্রামের লক্ষ্মীপুজোয় ভিড় জমান।
কথিত আছে, মায়ের প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিন ব্রহ্মচারী দয়ালের হাতে দু’টি নিমপাতা ও জল তুলে দেন। তা খেয়ে তৃপ্তিলাভ করেন দয়াল। সেই থেকে ওই নিমগাছের পাতা মিষ্টি। পরবর্তীকালে মুর্শিদাবাদের কান্দির রাজা কৃষ্ণচন্দ্র মায়ের মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরের সেবাইত গুরুস্মরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ফিবছর মন্দিরে হাজার হাজার ভক্ত সমাগম হয়। করোনা সংক্রমণ এড়াতে এবার ভক্তদের মন্দিরে ভিড় না করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারও করা হচ্ছে। কারণ এবার গর্ভগৃহে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেবাইতরা ভক্তদের ডালা নিয়ে গিয়ে পুজো করিয়ে দেবেন। বন্ধ রাখা হচ্ছে ভোগ প্রসাদ বিতরণও। তবে, রীতি মেনে মহাযজ্ঞে ১০৮টি ক্ষীরের তৈরি নাড়ু আহুতি দেওয়া হবে।