কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
জঙ্গিদের গুলিতে জঙ্গিপুরের পাঁচ শ্রমিকের ঝাঁঝরা হওয়ার খবর আসতেই শোকের ছায়া নেমে গিয়েছিল সেদিন। পাশাপাশি আতঙ্কে ভুগতে থাকেন কাশ্মীরে কাজে যাওয়া জেলার অন্যান্য শ্রমিক আর রাজমিস্ত্রিরা। পর পর তিনটি গুলি লাগলেও সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান একই গ্রামের বাসিন্দা জহিরুদ্দিন।
হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে আপাতত সুস্থ হলেও গুলিতে জখম হাত এখনও পুরোপুরি ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, তখন সন্ধ্যা সাতটা ১০ বা ১৫মিনিট হবে। রুটির দোকানের দোতলার একটি ছোট ঘরে বসে অন্যান্য দিনের মতোই নিজেদের মধ্যে গল্প করছিলাম। ওখানে আমরা সাত বন্ধু মিলে ২৭দিন ধরে ছিলাম। সারাদিন আপেল বাগানে কাজ করে ওই ঘরে ফিরে রাতে ঘুমোতাম। আবার সকাল ৯টা নাগাদ বাগানে কাজ করতে বেরিয়ে যেতাম। বাগান মালিকই সেখানে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। ফলের বাগানে কাজ কমে আসায় দু’দিনের মধ্যেই গ্রামে ফিরতাম। বাড়ি ফেরার জন্য পরদিনই ট্রেন ধরার কথাছিল। তাই তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমোতে চাইছিলাম। সেইমতো আমাদের সঙ্গী বসিরুল সরকার বাইরে খাবার আনতে গিয়েছিল। কাশ্মীরের পরিবেশ বেশ কিছুদিন ধরেই থমথমে ছিল। বসিরুল যাওয়ার পরই দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। হঠাৎই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। ভেবেছিলাম বসিরুল এসেছে। কিন্তু দরজা খুলতেই দেখি চারজন জঙ্গি একে-৪৭ এর মতো আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের দেখেই আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। কোনওকিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরা আমাদের দোতলার ঘর থেকে টেনে নীচে নামিয়ে আনে। আসতে না চাওয়ায় ওরা মারধরও শুরু করে। এরপর জোর করে সবাইকে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি করে। সবারই বুকে গুলি করা হয়েছিল। শরীরের অন্যান্য জায়গাতেও গুলি লাগে। আমার পায়ে প্রথমে গুলি লাগে, লুটিয়ে পড়ি। তারপরও ওরা আমাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। হাতে ও বুকের কাছে গুলি লেগেছিল। তখন চারদিক রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। ওই অবস্থায় কীভাবে বেঁচেছিলাম সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না। সন্ত্রাসবাদীরা আমাকে মৃত ভেবে আর গুলি করেনি।
জহিরুদ্দিন ও মৃত পাঁচ শ্রমিকের পরিবারকে চাকরি, সরকারি বাড়ি সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। মিলেছে কাশ্মীর সরকারেরও দেওয়া আর্থিক সাহায্যও। কিন্তু, পরিবারের প্রিয় মানুষদের হারিয়ে শোকে কাতর পরিবারের লোকজন থেকে আত্মীয় পরিজনরা। সেই থেকে কাশ্মীরে আর কাজে যায়নি বাহালনগরের শ্রমিকরা। সেইদিনের ভয়ঙ্কর ঘটনার কথা জানার পর আজও আতঙ্ক কাটেনি তাঁদের। বাহালনগরের যুবক আব্দুল আহাদ বলেন, কী করে আর ওখানে কাজে যাব। আবার যদি কিছু ঘটে!