নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: করোনা ভ্যাকসিন মজুত রাখতে ঢেলে পরিকাঠামো সাজানোয় জোর দিল স্বাস্থ্যদপ্তর। তাই বীরভূমে বাড়ানো হচ্ছে কোল্ড চেন পয়েন্ট। বর্তমানে জেলায় যেসব কোল্ড চেন পয়েন্ট রয়েছে তার সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ানো হবে। তার সঙ্গে কেন্দ্রের সংখ্যাও বাড়বে বলে স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। বীরভূম স্বাস্থ্যজেলার ডেপুটি সিএমওএইচ-৩ জয়ন্ত সুকুল বলেন, বর্তমানে ২৮টি কোল্ড চেন পয়েন্ট রয়েছে। সেগুলিতে সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ানো হবে। তার সঙ্গে কিছু অতিরিক্ত কোল্ড চেন পয়েন্টও বাড়বে। সেজন্য কোথায় কোল্ড চেন পয়েন্ট বাড়বে তার কাজ শুরু হয়েছে। অবিলম্বে কোল্ড চেন পয়েন্ট সংক্রান্ত তথ্য রাজ্যের কাছে পাঠানো হবে। রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের অনুমোদন পেলে তা বাড়ানো হবে। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশেই করোনা ভ্যাকসিন প্রস্তুত করে তার পরীক্ষামূলক ব্যবহারের প্রক্রিয়া চলবে বলে খবর। কয়েকমাসের মধ্যে সেই ভ্যাকসিন জেলায় আসতে পারেও বলে অনেকে মনে করছেন। তার আগে সব ধরনের প্রস্তুতি সাজিয়ে রাখতে চাইছে স্বাস্থ্যদপ্তর। স্বাস্থ্যদপ্তরের অনেকেই মনে করছেন, করোনা ভ্যাকসিন এলে প্রথমে তা স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হতে পারে। সেজন্য জেলায় সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের তথ্য চেয়েছে রাজ্য। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সেই তালিকা জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর রাজ্যের কাছে পাঠাবে। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর্মীরাই প্রথম সারির যোদ্ধা। তাঁরা করোনা আক্রান্তদের প্রতিনিয়ত চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছেন। সেই কাজ করতে গিয়ে বহু স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকী চিকিৎসক, নার্সদেরও একটি বড় অংশ সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। জেলায় ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের কয়েকজন মারাও গিয়েছেন। মৃত্যুর তালিকায় চিকিৎসকও রয়েছেন। তাই সেইসব স্বাস্থ্যকর্মীকে করোনা ভ্যাকসিন আগে দেওয়া হতে পারে। নতুন বছরের প্রথমেই করোনা ভ্যাকসিন আসতে পারে। তাই ভ্যাকসিন যাতে নির্দিষ্টভাবে সংরক্ষণ করা যায় সেব্যাপারে প্রস্তুতি শুরু করেছে স্বাস্থ্যদপ্তর। স্বাস্থ্যদপ্তরের এক কর্তা বলেন, সিউড়ি সদর ও বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের পাশাপাশি জেলার প্রত্যেক ব্লকে কোল্ড চেন পয়েন্ট রয়েছে। সেই কোল্ড চেন পয়েন্টগুলিতে শিশু ও প্রসূতিদের জন্য ভ্যাকসিন রাখা হয়। বিভিন্ন ব্লক গ্রামীণ হাসপাতাল বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে রোগীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। সেই কোল্ড চেন পয়েন্টে করোনা ভ্যাকসিনও রাখা হবে।
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা ভ্যাকসিন বিপুল পরিমাণে আসার খবর রয়েছে। তাই সেই পরিমাণ ভ্যাকসিন মজুত রাখার জন্য নির্দিষ্ট পরিকাঠামো প্রয়োজন। বীরভূম স্বাস্থ্যজেলায় তাই ভ্যাকসিন মজুত রাখতে কোল্ড চেন পয়েন্টগুলির জন্য ভ্যাকসিন ক্যারিয়ার, আইএলআর ডিপ ফ্রিজ কেনা হবে।
বীরভূম জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে জেলার বিভিন্ন ব্লকে কোল্ড চেন পয়েন্ট রয়েছে। কিন্তু, ব্লক হাসপাতাল থেকে কিছু এলাকার দূরত্ব অনেক বেশি। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও সমস্যা রয়েছে। তাই সেইসব প্রান্তিক এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাতে করোনা ভ্যাকসিন পৌঁছনো যায় সেই পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। দপ্তরের এক কর্তা বলেন, মহম্মদবাজারের গণপুর এলাকায় এরকমই কোল্ড চেন পয়েন্ট করা হতে পারে। কারণ মহম্মদবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গণপুরের দূরত্ব অনেকটাই বেশি। তাই সেখানে যাতে সহজে ভ্যাকসিন পৌঁছনো যায় সেজন্য কোল্ড চেন পয়েন্ট করা হতে পারে। তাছাড়া সারা জেলায় আরও কিছু কেন্দ্র করা হবে। রামপুরহাট স্বাস্থ্যজেলার সিএমওএইচ রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, নির্দেশমতো আমরা স্বাস্থ্যকর্মীদের তালিকা প্রস্তুত করছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা রাজ্যের কাছে পাঠানো হবে। ভ্যাকসিন রাখতে কোল্ড চেন পয়েন্ট পর্যাপ্ত রয়েছে। প্রয়োজন হলে তা রাজ্য সরকার বিবেচনা করবে। পরিস্থিতি বুঝে সেইমতো আবেদন করা হবে।