বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
রাজবাড়ির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, রাজা গজপতি সিংহ ছিলেন এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর রাজ্যপাট ছিল গড়বেতায়। সেখানে একসময় তাঁর বিশাল রাজপ্রাসাদও ছিল। ১৭২০ সালে রাজা শ্যামসেরজং বাহাদুর মঙ্গলাপোতায় নতুন রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন। তাঁর উদ্যোগেই রাজবাড়িতে প্রথম দুর্গাপুজো শুরু হয়। তবে, তিনি কোনও স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো শুরু করেছিলেন কি না, তা জানা যায় না।
রাজবাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে চুয়াড় বিদ্রোহের ইতিহাস। এই রাজবংশের পূর্বসূরি রাজা যাদবচন্দ্র সিংহ চুয়াড় বিদ্রোহে সহযোগিতা করেছিলেন। সেই অপরাধে ব্রিটিশরা তাঁকে ফোর্ট উইলিয়ামে বন্দি করেন। পরে, সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর ছেলে ছত্রসিংহও এই বিদ্রোহে সহযোগিতা করেছিলেন। তাঁকে হুগলি জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। এই রাজবংশের সেনাপতি অচল সিংহ চুয়াড় বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
রাজবাড়ির পুজোর বেশকিছু বিশেষত্ব রয়েছে। গুরুপূর্ণিমার দিন প্রতিমায় মাটি দেওয়া শুরু হয়। ঘটপুজোর পাশাপাশি রাজবাড়িতে তলোয়ার পুজো হয়। জিতাষ্টমীর পর মহালয়ার দিনও শিলাবতী নদী থেকে ঘটে জল ভরে নিয়ে এসে মন্দিরে পুজো করা হয়। মহালয়ার দিন থেকেই মন্দিরে হোম আর চণ্ডীপাঠ শুরু হয়ে যায়। একমাস ধরে সেই নিয়ম মেনে এবারও মন্দিরে পুজো হবে। ষষ্ঠীর দিন থেকে দশমী পর্যন্ত নিয়ম মেনেই পুজো হয়। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত একটি করে ছাগ বলি দেওয়া হয়।
কথিত আছে, একসময় অষ্টমীর দিন গভীর রাতে নিশিপুজোর সময় নরবলি দেওয়া হতো। এখন ছাগ বলি দিয়ে নিশিপুজো হয়। রাজবাড়ির সদস্য অরবিন্দ সিংহদেবকে এলাকায় এখনও অনেকে রাজা বলে সম্বোধন করেন। এই রাজবাড়ির পূর্বসূরিদের পদবি ছিল সিংহ। পরবর্তীকালে তা হয় সিংহদেব।
পদবি পরিবর্তনের প্রসঙ্গে অরবিন্দবাবুর ছেলে সমরজিৎ সিংহদেব বললেন, এই বংশের পূর্বসূরি রাজা ছত্রসিংহের কোনও পুত্রসন্তান ছিল না। তাঁর কন্যার বিয়ে হয় বাঁকুড়ার খাতড়ার রায়পুরের রাজার ছেলের সঙ্গে। তাঁদের পদবি ছিল সিংহদেব। সেই থেকেই আমাদের পদবি হয়ে যায় সিংহদেব। দশমীর দিন সিঁদুর খেলার কোনও রেওয়াজ রাজ পরিবারে নেই। ওই দিন রাজপরিবারের সদস্যরা শূন্যে গুলি চালিয়ে বিজয়যাত্রা উৎসব পালন করেন। পরে, রাজবাড়ির কাছেই নতুন পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন হয়।
আগে রাজবাড়ির আশপাশে কোথাও পুজো হতো না। ফলে এই পুজোই ছিল সকলের আকর্ষণের কেন্দ্র। গ্রামবাসীরা সারাবছর রাজবাড়ির পুজোর দিকে তাকিয়ে থাকতেন। এখন অবশ্য আশপাশে একাধিক পুজো হয়। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পর রাজবাড়ির পুজোর ঐতিহ্য ধরে রাখতে গ্রামবাসীরাই এগিয়ে আসেন। এখনও সকলের আর্থিক সাহায্যেই রাজবাড়ির পুজো হয়। অতীতের ঠাটবাট না থাকলেও আন্তরিকতার কোনও অভাব নেই ।