রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুকুরে নেমে বন্ধুদের মোবাইলে ছবি তুলতে বলেন সুখেন্দু। তারপরই জলে তলিয়ে যান তিনি। বন্ধুদের চিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা এসে তাঁকে জল থেকে উদ্ধার করে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
কাটোয়া-২ ব্লকের দোনা গ্রামের ভট্টাচার্য বাড়ির দুর্গাপুজো এলাকায় বিখ্যাত। প্রাচীন রীতি মেনে বনেদি বাড়ির এই পুজোর ঘট আনা হয়। পারিবারিক নিয়ম মেনে পুজোর সাত দিন আগে থেকে প্রতিদিন সমস্ত দায়িত্ব একজন শরিকের থাকে। এদিন ভট্টাচার্য বাড়ির সদস্য স্বপন ভট্টাচার্যের পালা ছিল। স্বপনবাবু গুজরাতে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। মা শ্যামলীদেবী ছেলেকে নিয়ে কাটয়োয়া শহরের ঠাকুরপুকুর এলাকায় থাকতেন। স্বপনবাবু দিন তিনেক আগেই পুজোর জন্য গুজরাত থেকে ফিরেছেন। এদিন তিনি স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে সুখেন্দু ও ছেলের কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন।
ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের হাত ধরে শুরু হয়েছিল। একই মন্দিরে দুটি প্রতিমা আনা হয়। পুজোর রীতিনীতিও প্রাচীন রেওয়াজ মেনেই হয়। আজও জলঘড়ি দেখেই সন্ধিপুজো শুরু হয় এই পরিবারে। একটি বড় পাত্রে জল নিয়ে তার উপর দুটি বাটি ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ওই বাটিগুলি বিশেষভাবে তৈরি। বাটি দুটির নীচে দুটি ছিদ্র করা থাকে। সেই ছিদ্র দিয়ে জল প্রবেশ করে ছোট বাটিটি ডোবাতে সময় নেয় ১৮ মিনিট। বড়টির ক্ষেত্রে ২৪ মিনিট সময় লাগে। কোন বাটি কতবার ডুবল তা হিসেব করেই পুজোর সময় নির্ধারণ করা হয়। এইসব প্রাচীন রীতিনীতি দেখাতেই সুখেন্দু তাঁর বন্ধুদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন।
গ্রামের বাড়ি এসে সুখেন্দু বন্ধুদের বাড়ির ঠাকুর দালান, জোড়া প্রতিমা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখান। বন্ধুরা মোবাইলে ছবি তুলে এবারের পুজো স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলেন। সকাল ৯টা নাগাদ সুখেন্দু পুকুরে স্নান করতে যান। বন্ধুদের নিয়ে বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে পুকুরে স্নান করতে গিয়েছিলেন। বন্ধুদের বলেছিলেন, পুকুরে স্নানের দৃশ্য মোবাইল বন্দি করে রাখতে। তারপর আচমকাই তিনি জলে তলিয়ে যান। পরিবারের একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে পুজোর আনন্দ নিমেষে বদলে শোকের আবহ তৈরি করে। হই হুল্লোড় থেমে যায়। বাড়িতে তখন কান্নার রোল। সুখেন্দুর বাবা স্বপনবাবু ও মা শ্যামলীদেবী বারবার জ্ঞান হারাতে থাকেন।
এদিন কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে সুখেন্দুর জেঠু অপূর্ব ভট্টাচার্য বলেন, আমরা পাঁচ ভাই। সুখেন্দুই পরিবারের একমাত্র ছেলে। ওকে নিজের ছেলের মতোই দেখতাম। ওর মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকত। বন্ধুদের নিয়ে পুজো দেখতে এসে সব শেষ হয়ে গেল। চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, উৎসবে আর প্রাণ রইল না। নিয়মরক্ষার পুজো হবে। ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোয় আবাহনের আগেই বেজে গেল বিসর্জনের বাজনা।