শ্রীকান্ত পড়্যা  তমলুক: পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ক্ষতিপূরণের জন্য দু’দিনে ড্রপবক্সে জমা পড়া দু’লক্ষাধিক আবেদনের মধ্যে দেড় লক্ষ আবেদনই ভুয়ো। বৃহস্পতিবার ওই তালিকা চূড়ান্ত করেছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য রাজ্যের কাছ থেকে আরও ৩৫কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।
গত ৬ ও ৭আগস্ট জেলার ২৫টি বিডিও অফিস এবং চারটি এসডিও অফিসে ড্রপবক্সে মোট ২লক্ষ ১১হাজার আবেদন জমা পড়েছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেইসব আবেদন ইন্সপেকশন করেছে প্রশাসন। তারমধ্যে ৬২হাজার ২৭৯জন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত চিহ্নিত হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ১৬৪৫জন। বাদ গিয়েছে ১লক্ষ ৪৭হাজার আবেদন। জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ইন্সপেকশনের কাজ এখনও চলছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ড্রপবক্সে সবচেয়ে বেশি আবেদন এসেছে হলদিয়া ব্লকে। সেখানে ১৮হাজার ৮৩৮জন আবেদন করেছিলেন। তারমধ্যে বাতিল হয়েছে ১৩হাজার ২৯৪টি। শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে ড্রপবক্সে ১৫হাজার ২২জন আবেদন জমা করেছেন। বাতিল হয়েছে ১০হাজার ৪৫১টি। খেজুরি-১ব্লকে আবেদন জমা পড়েছে ১৩হাজার ৬১৬টি। তারমধ্যে বাতিল হয়েছে ১২হাজার ৩০০টি। উম-পুনের ক্ষতিপূরণ বিলি নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা নন্দীগ্রাম-১ব্লকে আবেদনকারীর সংখ্যা তুলনায় কম ছিল। সেখানে ৩৫১৭জন ড্রপবক্সে আবেদন জমা করেছেন। বাতিল হয়েছে ২৪৭০টি।
মাত্র পাঁচ-ছ’দিনের মধ্যে ২লক্ষ ১১হাজার আবেদন ইন্সপেকশন করা যথেষ্ঠ চ্যালেঞ্জের কাজ। প্রশাসন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই কাজ করেছে। বুধবার অনেক রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বিডিও অফিস থেকে ডেটা সংগ্রহ করে জেলায় নথিভুক্ত করার কাজ চলছে। ড্রপবক্সে আবেদন করার পর যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত তাঁদের তালিকা আজ, শুক্রবার সমস্ত এসডিও এবং বিডিও অফিসে টাঙানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য থেকে টাকা এলেই জেলা থেকে সরাসরি অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে। এবার টাকা ব্লক পর্যন্ত পাঠাবে না জেলা প্রশাসন। তবে, ড্রপবক্সে আবেদন করার পরও বাড়ি বাড়ি কোনও ইন্সপেকশন হয়নি বলে দাবি করছেন অনেকেই। যেমন, ৭আগস্ট নন্দীগ্রাম-১বিডিও অফিসে ড্রপবক্সে আবেদন করেছিলেন মহম্মদপুর-১গ্রাম পঞ্চায়েতের চিল্লগ্রামের রবিউল খাঁ। তিনি বলেন, আমার বাড়িতে পঞ্চায়েত কিংবা ব্লক প্রশাসনের কোনও প্রতিনিধি আসেননি। শুধু আমি নই, ক্ষতিপূরণ থেকে বাদ পড়া এখানকার ৪০-৪৫জন আবেদন করেছিলেন। কারও বাড়িতে সরকারি লোকজন যাননি। এব্যাপারে নন্দীগ্রাম-১বিডিও সুব্রত মল্লিক বলেন, আমাদের কাছে যত দরখাস্ত পড়েছে, তার সবই ইন্সপেকশন করেছি। জেলায় প্রায় ২৬৮কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরও ৬০হাজারের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বাদ পড়ার ঘটনাও উল্লেখযোগ্য। রাজ্য সরকার দু’দিন ড্রপবক্সে আবেদনের সুযোগ না দিলে ওই সংখ্যক ক্ষতিগ্রস্ত কখনওই ক্ষতিপূরণ পেতেন না। নবান্ন বিশেষ অভিযান চালাতেই তাঁদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ এল। অনেক ব্লক ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া টাকা খরচ করতে পারেনি। সেজন্য জেলা প্রশাসন সাত-আটটি ব্লক থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। তারপরও সেইসব ব্লকে ক্ষতিগ্রস্তরা কীভাবে ক্ষতিপূরণ থেকে বাদ পড়লেন, সেনিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।