অলকাভ নিয়োগী  বর্ধমান: বিশ্বজুড়ে করোনার প্রকোপ চলছে। কিন্তু, এই মহামারীর মধ্যেও গ্রামীণ এলাকার উন্নয়ন থেমে নেই। করোনা পরিস্থিতিতে গত চারমাসে পূর্ব বর্ধমান জেলার পঞ্চায়েতগুলি উন্নয়নের কাজে প্রায় ১১৪ কোটি টাকা খরচ করল। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় এক কোটি টাকা করে খরচ করা হয়েছে। তবে, টাকা খরচের দিক থেকে জেলার ২১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৫টি পঞ্চায়েতের পারফরমেন্স ভালো নয়। জেলা প্রশাসন ওই পঞ্চায়েতগুলিকে সতর্কও করেছে। দ্রুত টাকা খরচ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে যে পঞ্চায়েতগুলি ভালো কাজ করছে, জেলা থেকে তাদের উৎসাহিতও করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের অনুদান, বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুদান, কেন্দ্রীয় তহবিল এবং পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি এলাকা উন্নয়নের কাজ করে। সব তহবিল মিলিয়ে ২০১৯-২০২০ আর্থিক বছরে জেলার ২১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতে উন্নয়নের জন্য প্রায় ৪৯১ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা ছিল। ৩১ মার্চের মধ্যেই সমস্ত টাকা খরচ করার কথা ছিল। কিন্তু, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই টাকা খরচ করা যায়নি। ৩১ মার্চ পর্যন্ত ২১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় ২২০ কোটি টাকা উন্নয়ন খাতে পড়েছিল। সেই টাকা দ্রুত শেষ করার জন্য জেলা প্রশাসন এবং জেলা পরিষদ থেকে প্রতিটি পঞ্চায়েতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ২১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে নিয়ে বৈঠকও করা হয়েছে। তারপরই পুরোদমে কাজ শুরু হয়।
প্রতি মাসে টাকা খরচের হিসেব রাখছে জেলা প্রশাসন। পুজোর মধ্যেই ওই ২২০ কোটি টাকা শেষ করার চেষ্টা চলছে। প্রশাসনের দাবি, ২২০ কোটি টাকার মধ্যে ১ এপ্রিল থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত এই চার মাসে প্রায় ১১৪ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত দু’মাসে ৫১ কোটি টাকা, ১ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৩৭ কোটি টাকা এবং ১ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ২৬ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। বাকি টাকার কাজ চলছে। যে ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের পারফরমেন্স ভালো নয়, তার মধ্যে বর্ধমান সদর উত্তর মহকুমায় চারটি, বর্ধমান সদর দক্ষিণ মহকুমায় তিনটি, কালনা মহকুমায় চারটি এবং কাটোয়া মহকুমায় চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। প্রশাসনের দাবি, পুরনো টাকা খরচ করতে না পারলে তাদের নতুন করে রাজ্যের অনুদান দেওয়া হবে না।
পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে। সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে, সঠিক সময়ের মধ্যে টাকা খরচ করতে হবে। যে ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের পারফরমেন্স ভালো নয়, আমরা তাদের সতর্কও করেছি। যারা ভালো কাজ করছে, তাদের উৎসাহিতও করছি। জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া বলেন, উন্নয়নে আরও জোর দেওয়ার জন্য জেলার ২১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানদের নিয়ে আমরা ১২ আগস্ট সংস্কৃতি লোকমঞ্চে একটি বৈঠক ডেকেছি। সেখানে প্রতিটি পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক, ২৩টি ব্লকের বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরাও থাকবেন। ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত কেন ভালো কাজ করতে পারেনি, তাদের কাছে জানতে চাওয়া হবে। আমরা জেলাজুড়ে নজরদারি চালাচ্ছি।