সংবাদদাতা, পূর্বস্থলী: করোনা আবহে তাঁতের বাজারে মন্দা। সমুদ্রগড়ের তাঁতহাটে অর্ধেক দামে মিলছে শাড়ি। বিক্রেতাদের দাবি, ক্রেতার অভাবে তাঁরা কম দামে শাড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁতিরাও আর আগের মতো মজুরি পাচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার ওই হাটে গিয়ে দেখা গেল ১২০০ টাকা দামের অলওভার শাড়ি ৭০০ টাকা, ৯০০ টাকার রঙ্গবতী শাড়ি ৬০০ টাকা, ১০০০ টাকার তাঁত জামদানি ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাস দুয়েকের ব্যবধানে পুজোর বাজার শুরু হবে। শহরের শাড়ি ব্যবসায়ীরা ট্রাক নিয়ে তাঁতহাটে আসবেন। লক্ষ লক্ষ টাকার শাড়ি, কাপড় বিক্রি হতে দেখা যাবে। কিন্তু তার আগে শাড়ির এই নিম্নমুখী দাম দেখে অনেকে হতাশা বোধ করতে শুরু করেছেন। এদিন ওই হাটে ৯৪ জন বিক্রেতাকে শাড়ি বিক্রি করতে দেখা গিয়েছে। পাইকারির পাশাপাশি খুচরো দামে শাড়ি কিনতে পারা যায়। যদিও ওই হাটে ২১৫ জন বিক্রেতার বসার জায়গা আছে। করোনা সংক্রমণের ভয়ে তাঁদের অনেকেই হাটে বসতে ভয় পাচ্ছেন। এদিন নোনারমাঠের এক শাড়ি বিক্রেতা বলেন, কম দামে শাড়ি বেচতে বাধ্য হচ্ছি। দুরের ক্রেতারা হাটে কম আসছেন। স্থানীয়রা সেই সুযোগটাই নিচ্ছেন। ক্রেতাদের সঙ্গে দামাদামি করতে হচ্ছে। না হলে জীবনে এত কম দামে তাঁতের শাড়ি বিক্রি করিনি। তাঁতিরাও কম মজুরি নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া উপায় নেই। সমুদ্রগড় তাঁত মালিক সমিতির এক সদস্য বলেন, এখন তাঁতের বাজার মন্দা। পুজোর মার্কেট শুরু হয়নি। এই সময় স্থানীয় কিছু অর্থবান ব্যবসায়ী শাড়ি কিনে মজুত করছেন। পুজোর আগে ওই শাড়ি তাঁরা চড়া দামে বিক্রি করবেন বলে মনে হয়। লকডাউনে বহুদিন তাঁতের হাট বন্ধ ছিল। এখন সপ্তাহে রবিবার, বৃহস্পতিবার দুদিন বসে। তার উপর এখন তো প্রতি রবিবার লকডাউনের জন্য বন্ধ থাকছে। স্থানীয় তাঁতিরা হতাশ হয়েছেন। কেননা এখন সপ্তাহে একদিন হাট বসবে।
পূর্ব বর্ধমান জেলার তাঁতবলয় হিসাবে পরিচিত সমুদ্রগড় অঞ্চল। স্থানীয় প্রায় ১০ হাজার মানুষ এই পেশায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত। সম্প্রতি মহকুমায় আরও ২টি সরকারি তাঁতের হাট তৈরি হয়েছে। যদিও ওই হাটে ক্রেতা, বিক্রেতারা কম যান। মুলত শ্রাবণ মাস থেকে তাঁতিপাড়ায় পুজোর সিজন শুরু হয়। নানা বৈচিত্রের শাড়ি বোনা হয়। তবে, এলাকায় এখন বহু পাওয়ারলুম বসেছে। সেই শাড়ির ফিনিশিং ভালো। দামেও কিছুটা কম। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আনারুল মণ্ডল বলেন, পুজোর আগে নকশা বোঝাই শাড়ি (অলওভার) বেশি বিক্রি হচ্ছে। লকডাউনের জন্যে এত কম দামে শাড়ি কখনও বিক্রি হয়নি।