দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় ও ব্যবসা থেকে অর্থাগম যোগ। প্রেমের প্রস্তাব পেতে পারেন। পুজো পাঠে মন। ... বিশদ
সেই থেকেই শুরু। বাড়িতে টিভি ছিল না। অন্যের বাড়ি গিয়ে ডিসকভারি, অ্যানিম্যাল প্ল্যানেট দেখত ছোট্ট দেবরাজ। তখনই সে দেখে অস্টিন স্টিভেন্সকে। অ্যানিম্যাল প্ল্যানেটেই তার পরিচয় স্টিভেন্সের সঙ্গে। টিভি দেখেই মেনে নেওয়া ‘গুরু’ বলে। তারপর একটা প্রতিজ্ঞা... ওদের বাঁচাতে হবে। হেলে, জলঢোঁরা ধরেই হাতে খড়ি। তারপর থেকেই সাপ ধরায় নেশা লেগে গেল। তখন ক্লাস সিক্স। তখনই ঘটল ঘটনা... ওটা ছিল কেউটে। পাড়ার লোকজন প্রায় মেরেই ফেলেছিল তাকে। দেবরাজ দেখতে পেয়ে উদ্ধার করেন। তারপর কৌটোয় ভরে দেড় মাস রেখে দিয়েছিলেন নিজের কাছে। সুস্থ হওয়ার পর ছেড়ে এসেছিলেন জঙ্গলে। তারপর থেকেই কারও বাড়িতে বিষধর সাপ ঢুকলেই ডাক পড়ত দেবরাজের। আর তিনিও নাওয়া খাওয়া ভুলে ছুটতেন সেখানে।
তিনি বলছিলেন, ‘ওয়েল্ডিং করে দু’পয়সা রোজগার করি। মাঝেমধ্যে সাপ ধরতাম। গত ডিসেম্বর মাসে সোশ্যাল মিডিয়া সূত্রে জানাজানি হয়েছে। এখন প্রচুর ডাক পড়ছে। ডিসেম্বর থেকে জুলাই পর্যন্ত ৮৭টি বিষধর সাপ ধরে জঙ্গলে ছেড়ে এসেছি। গত দু’মাসেই ৬০টা।’
সংসারের অবস্থা ভালো ছিল না। তাই উচ্চ মাধ্যমিকের বেশি এগতে পারেননি। বীরভূমের একটা হ্যাচারি ফার্মে কয়েক বছর ছিলেন। কিন্তু, অভ্যেসটা থেকেই গিয়েছে। কথায় বলে না, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে... দেবরাজও অভ্যাস ছাড়তে পারেননি।
বিয়ে করেছেন। আছে এক ছেলে এক মেয়ে। তাও তিনি আগের দেবরাজই থেকে গিয়েছেন। স্ত্রী আল্পনা বলছিলেন, ‘লকডাউনে রোজগার নেই। সংসার চালানোই এখন দায়। সাপ ধরে তো রোজগার নেই! কিন্তু জীবনের ঝুঁকিও রয়েছে। বহু নিষেধ করেছি। শোনে না। এখন আর কিছু বলি না।’
কাজ বন্ধ। কিন্তু আবেগ? সে তো কারও কথা শোনে না! অস্টিন স্টিভেন্সের সঙ্গে দেবরাজ যোগাযোগ করেছেন ফেসবুক মেসেঞ্জারে। সেই যোগাযোগ প্রায় প্রতিনিয়ত। দেবরাজ সাপ ধরেন, তার ছবি বা ভিডিও পাঠান স্টিভেন্সকে। স্নেকমাস্টারও ভীষণ খুশি। কেউ তো আবেগ দিয়ে বাঁচায় এই অবলা জীবটাকে! দেবরাজকে লিখেছেন, ‘তোমার যা আবেগ, অভিজ্ঞতা... যে কোনও নেচার পার্ক, রেপ্টাইল পার্ক বা জু তোমাকে পেলে খুশি হবে।’
হাল ছেড়ো না... এই বার্তাই দিয়ে চলেছেন ‘গুরু’ স্টিভেন্স। আর দেবরাজ? তাঁর একটাই কথা, ‘আমার গুরু অস্টিন স্যার আমার কাজের প্রশংসা করেছেন, সেটাই আমার প্রাপ্তি।’