দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় ও ব্যবসা থেকে অর্থাগম যোগ। প্রেমের প্রস্তাব পেতে পারেন। পুজো পাঠে মন। ... বিশদ
অন্য বছর রথযাত্রার পর থেকেই শাড়ি তৈরির বরাত আসত শান্তিপুরের তাঁতিপাড়ায়। শান্তিপুরের শাড়ির নামডাক যথেষ্ট। হালকা ও আধুনিকতার মিশেলে তৈরি শান্তিপুরের শাড়ি। তাই শহরের ফ্যাশন-দুরস্ত মহিলাদের কাছে এই শাড়ির কদরই আলাদা। সেই কারণেই কলকাতার বড়বাজার, কলেজ স্ট্রিট, শ্যামবাজার, ধর্মতলা, গড়িয়াহাট সহ বড় বড় শপিংমলে থরে থরে সাজানো থাকে ফুলিয়ার শাড়ি। সামনে ঝোলানো থাকে হোডিং, ‘এখানে ফুলিয়ার শাড়ি পাওয়া যায়।’ পাঁচশো টাকা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার শাড়ি তৈরি হয় এখানেই। দামি দামি সেই সব শাড়ি পাড়ি দেয় বিদেশেও। পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ার অনেক আগেই শান্তিপুরের তাঁতশিল্পীদের পাড়ায় শুরু হয়ে যেত রাতজাগা।
করোনা আবহে শান্তিপুর-ফুলিয়ার ব্যস্ততার সেই চেনা ছবিটা উধাও। শিল্পীদের ঘরে জমে রয়েছে শাড়ির লাট। লকডাউনে দোকান বন্ধ। দীর্ঘদিন বিক্রিবাটা নেই। তাই চাহিদাও নেই। পুজোর আগে পরিস্থিতি বদলানোর খুব একটা সম্ভাবনাও নেই। কারণ করোনা বাড়ছে প্রায় বিদ্যুৎ গতিতে। মানুষ প্রাণ বাঁচাতেই ব্যস্ত। সাজার এবং নিজেকে সাজানোর কথা প্রায় ভুলতে বসেছে।
শান্তিপুর শহর ছাড়াও আশপাশের গ্রামের বহু মানুষের তাঁতই জীবিকা। শাড়ি বোনার পাশাপাশি সুতোর ব্যবসা, নকশা করা সহ আনুষঙ্গিক কাজেও জড়িয়ে রয়েছেন বহু মানুষ। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা লক্ষাধিক। এই মুহূর্তে তাঁদের বেশিরভাগই কর্মহীন। এক অসহনীয় অবস্থার মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে। শান্তিপুরের তাঁতশিল্পী রবীন্দ্র বসাক বলেন, ফি-বছর জুন মাসের প্রথমদিকেই পুজোর শাড়ির জন্য আমাদের কাছে বরাত চলে আসত। পুজোর আগে আমাদের কাজের অভাব হয় না। এই সময়ের উপায় দিয়েই বছরের অনেকটা সময় চলে যায়। পুজোর দিকেই তাকিয়ে থাকি। কিন্তু, এবছর মহামারীর কবলে পড়ে সব শেষ হয়ে গেল! এখনও একটি শাড়িরও বরাত পাইনি। ঘুরে দাঁড়ানোর সব আশাও দেখতে পাচ্ছি না।
শান্তিপুরে অনেকেই শিল্পীদের সুতো আর মজুরি দিয়ে শাড়ি বোনান। তারপর সেই শাড়ি নিজেরাই বাইরে পাঠান। যাঁদের স্টক বেশি থাকে, তাঁদের ঘরে কলকাতার মহাজনরা ভিড় জমান। ঘরে বসে লেটেস্ট ডিজাইনের শাড়ি বেছে নিয়ে যান। দোকানের শোকেস আলো করে থাকে সেই সব মন মাতানো শাড়ি।
শান্তিপুরেই রয়েছে ৩৮টি সমবায় সমিতি। তাঁদের অধীনে রয়েছেন প্রচুর তাঁতশিল্পী। শাড়ি বিক্রি করেই সমবায়গুলি শিল্পীদের মজুরি দেয়। কিন্তু, এই মুহূর্তে শাড়ি বিক্রি হচ্ছে না। তাই অনেক সমবায় শিল্পীদের পারিশ্রমিকও দিতে পারছে না। ফলে এক ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছেন তাঁতশিল্পীরা।
মঞ্জুষার চেয়ারম্যান অজয় দে স্বীকার করে নিয়েছেন শিল্পী ও তাঁতশিল্পের সমস্যার কথা। তিনি বলেন, এই বছর অনেক সেন্টার বন্ধ রয়েছে। তাই হয়তো পুজোর জন্য আলাদাভাবে কাপড় কেনা এবার যাবে না।