পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
মহম্মদবাজারের প্রান্তিক গ্রাম বেলগড়িয়া। আগে এই গ্রামকে তেমন কেউ চিনত না। না চেনারই কথা। আর পাঁচটা সাধারণ গ্রামের সঙ্গে কোনও ফারাক ছিল না। তবে এখন আছে। আর সেই ফারাকটা গড়ে দিয়েছেন রাজেশ ওরাং। জুন মাসে চীনের লাল ফৌজের হামলার বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে প্রতিরোধ গড়েছিলেন রাজেশ। দেশের জন্য লড়াই করতে গিয়ে শহিদ হয়েছিলেন রাজেশ। তারপর থেকেই বেলগড়িয়াকে মানুষ এই গ্রামকে চেনে ‘বীর শহিদের গ্রাম’ হিসেবে।
রাজেশের দু’ই বোন। দাদার কাছে তাঁরা ছিলেন বড় আদরের। দাদাকে ঘিরেই ছিল তাঁদের চাওয়া পাওয়া, ভালো থাকা। দাদা বাড়ি আসা মানেই উৎসব। আর সেই আসার দিনটা যখন হতো রাখীকে কেন্দ্র করে, তখন এই ছোট্ট বাড়িতে আনন্দ রাখার জায়গা হতো না। তাই রাখীতে রাজেশ আসতেন প্রায় নিয়ম করেই। দুই বোনের হাতে রাখী পরতে তাঁর বেশ লাগত। আর কোনও কারণে আসতে না পারলে ফোনেই চলত শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ জানানোর পর্ব। এবার সেই বাড়িতে রাখী নেই। সেনা ছাউনি থেকে দাদার ফোন নেই। সামনে নেই দাদার বলিষ্ঠ হাত দু’খানি। দাদা এখন শুধুই ছবি। রাখীর দিনে দুই বোনেরই দাদাকে বড় বেশি করে মনে পড়ছে। দুই বোন ঘুরছেন, ফিরছেন, ছবি দেখছেন, আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন।
রাজেশের বড় বোন রাজেশ্বরী বিবাহিত। পশ্চিম বর্ধমানে শ্বশুরবাড়ি। রাখীর দিনে বা ভাইফোঁটায় রাজেশ বাড়ি এলেই তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়ে আসতেন। তারপর কাজে যোগ দিতে যাওয়ার আগে আবার শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে দিতেন। রাজেশ মারা যাওয়ার পর তাঁর বাবা, মায়ের মানসিক অবস্থা একদম ভালো নেই। সব সময় মনমরা হয়ে থাকেন। তাই তারপর থেকে রাজেশ্বরী বেলগড়িয়াতেই আছেন। ক্যালেন্ডারের পাতার নিয়ম মেনে এসেছে রাখী। রাজেশ্বরীও রয়েছেন বাপের বাড়িতেই। কিন্তু নেই দাদা। তাঁর মনে পড়ছে পুরনো দিনগুলির কথা।
রাখীর দিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাদার উদ্দেশে ছোট বোন শকুন্তলার পোস্টে সেই মন খারাপের ছবি। তা দেখে অনেকেই শকুন্তলাকে জানিয়েছেন সমবেদনা। শকুন্তলা বলেন, আজ, খুব খারাপ লাগছে। এই রাখীর দিনে বাড়িতে কত আনন্দ হতো। দাদা আসত। দাদাকে রাখী পরাতাম। কত হইচই হতো। কিন্তু সব শেষ হয়ে গিয়েছে। আমরা আর কোনও দিনই দাদার হাতে রাখী বাঁধতে পারব না। দাদা আমাদের সমস্ত বাঁধন ছিন্ন করে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে। ফাইল চিত্র।