রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, এমনকী মুর্শিদাবাদেরও বহু পড়ুয়া জেলার মুখ উজ্জ্বল করতে পারলেও পশ্চিম বর্ধমান কেন পিছিয়ে? ফল প্রকাশের পর এই প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে। শিক্ষক মহলের একাংশের মতে, পাশ্ববর্তী কোনও জেলায় এখানকার মতো এত খ্যাতনামা বেসরকারি স্কুল নেই। তাই বহু ক্ষেত্রেই অভিভাবকরা বেসরকারি স্কুলের দিকে ঝোঁকেন। ফলে মেধা সম্পন্ন ছাত্রছাত্রীদের সরকার পোষিত বাংলা মাধ্যম স্কুলে সেভাবে দেখা যায় না। তাছাড়া তুলনামূলক এই জেলায় উপার্জনের নানা রাস্তা খোলা থাকায় কিশোর বয়স থেকেই অনেকে অর্থ উপার্জনের রাস্তা বেছে নেয়। ফলে অনেক পরিবারের কাছেই পড়াশোনা সেভাবে গুরুত্ব পায় না।
মাধ্যমিক পরীক্ষার জেলা কনভেনার দিব্যেন্দু সাহা বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও ছাত্রছাত্রীরা যাতে ভালো ফল করে তার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। এরজন্য আমরা পরীক্ষার আগে মক টেস্টও শুরু করেছি। অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ছে। আশা করি, সাফল্য মিলবে।
অনুশ্রী পঞ্চম শ্রেণী থেকেই আসানসোল উমারানি গড়াই মহিলা কল্যাণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। ছোট থেকেই পড়াশোনায় ছিল তার বিশেষ আগ্রহ। তাই বাড়ির সামনের স্কুলের বদলে ১৫ কিলোমিটার দূরে আসানসোলের এই স্কুলে পড়াশোনা নিয়ে আসেন তার বাবা-মা। কিন্তু, প্রতি পদে পদে পথ আগলেছে আর্থিক অনটন। তাই নবম শ্রেণী পর্যন্ত কোনও টিউশনি ছাড়াই তাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়েছে। পরে অবশ্য তিনজন টিউটর নেয়। তার মধ্যে দুজন শিক্ষক পরিবারের অবস্থা দেখে বেতন নিতেন না। অনুশ্রী ও তার মা বারবার স্কুলের অবদানের কথা স্বীকার করেছেন।
তার মা অঞ্জনা ঘোষ চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, মেয়েটা স্কুল থেকে ফিরে এলে দেখতাম, টিফিন খায়নি। তখনই জানতাম, টিফিনের সময়েও স্কুলের শিক্ষিকারা ওকে বিভিন্ন বিষয়ে পড়িয়ে সাহায্য করেছেন। অনুশ্রী ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়। বলে, আমার এই সাফল্যের পিছনে স্কুলের বিরাট অবদান রয়েছে।
অনুশ্রীর প্রিয় বিষয় অঙ্ক। সে ভবিষ্যতে আইআইটিতে পড়তে চায়। সে অঙ্কে ১০০, ভূগোলে ১০০, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৯, জীবনবিজ্ঞানে ৯৯, বাংলায় ৯৭, ইতিহাসে ৯৬ ও ইংরেজিতে ৯৩ নম্বর পেয়েছে।
অনুশ্রীর বাবা অচিন্ত্য ঘোষ বেসরকারি সংস্থায় অল্প বেতনের কর্মচারী। সংসার চালাতেই তাঁর হিমশিম খাওয়ার অবস্থা। তার উপর মেয়ের আইআইটি পড়ার ইচ্ছার কথা জানতে পেরে এখন থেকেই চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন। আজ এমন আনন্দের দিনেও তাঁর মনে আনন্দ নেই। তাঁর হৃদয়, মন গ্রাস করেছে একটাই ভাবনা, মেয়ের পড়াশোনার কী হবে? মেয়ের পড়ার খরচ জোগানোর চিন্তায় তিনি দিশেহারা।