কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
একটা সময় সময় ছিল যখন রেলশহর খড়্গপুরে রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল মাফিয়ারা। খুন-তোলাবাজি ছিল জলভাত। প্রথমদিকে রেলের ঠিকাদারি, অকশন, তোলাবাজি সমস্ত কিছুই নিয়ন্ত্রণ করত একজন। তার নাম বাসব রামবাবু। বাবা রেলে কাজ করতেন। সেই সূত্রেই বাবার হাত ধরে খড়্গপুরে আসা। রেলের ঠিকাদারি দিয়ে কর্মজীবনের শুরুয়াত। তারপর গোটা ঠিকাদারি ব্যবস্থাটাকেই পুরে ফেলেছিল পকেটে। অর্থ আর পেশিশক্তির দৌলতে পর্দার আড়ালে থেকে নিয়ন্ত্রণ করত রাজনীতি। ভোটের নিয়ন্ত্রণও ছিল তারই হাতে। তাই শাসক দলের কাছে গুরুত্বও ছিল যথেষ্ট। একদিকে রাজনীতির ছত্রচ্ছায়া, অন্যদিকে পুলিসের মদত। ফলে খড়্গপুরের ত্রাস হয়ে ওঠে রামবাবু।
সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য মাফিয়াদের রাজনীতির রং বদল রুটিন ব্যাপার। সকলেই চায় শাসক দলের আশ্রয়। কারণ শাসক দল পাশে থাকলে পুলিস ঘাঁটায় না। পুলিস আর শাসক পাশে থাকলেই বাড়ে বেপরোয়া ভাব। তখন সামনে যে বাধা সৃষ্টি করে তাকেই শেষ করে দেয় ‘ডন’। আর তাতেই বাড়ে নাম, যশ। বাম রাজত্বে খড়্গপুরে এই মাফিয়ারাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গিয়ে প্রাক্তন সিপিআই সাংসদ নারায়ণ চৌবের দুই ছেলে মানস ও গৌতমকে খুন হতে হয়েছে।
ক্ষমতা বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় ডনের নাম। দলের মধ্যে থেকেই তৈরি হয় চ্যালেঞ্জার। রামবাবুকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলে দিয়েছিল তারই হাতে গড়া শ্রীনু। স্ত্রী পূজাকে বিজেপির টিকিটে জিতিয়ে শ্রীনু প্রমাণ করেছিল তার দাপট। পুলিসের এক শীর্ষ অফিসারের পরামর্শে শ্রীনু নাম লেখায় শাসক দলে। কিন্তু, শ্রীনু বেশি দিন রাজত্ব চালাতে পারেনি। তাকেও খুন হতে হয়েছে। পূজা নাইডু এখন দল বদলে তৃণমূলের কাউন্সিলার। শ্রীনুই খড়্গপুরের বুকে দাপিয়ে বেড়ানো শেষ ডন।
পুলিস সক্রিয় হওয়ায় মাফিয়ারাজে কিছুটা ভাটা পড়েছে। কমেছে ধান্দা। আগে রেলের পরিত্যক্ত সরঞ্জাম বিক্রি করা হতো অকশন ডেকে। সেখানে ঝাড়খণ্ড, বিহার, ভুবনেশ্বর থেকেও ব্যবসায়ীরা অকশনে অংশ নিতে আসতেন। রামবাবুকে খুশি করতে পারলেই জুটত বরাত। তিনি নিমরাজি হলে সেই ব্যবসায়ীকে ফিরতে হতো খালি হাতে। ফলে, টেন্ডার পাওয়ার জন্য মামাকে খুশি করা ছিল অলিখিত নিয়ম। কিন্তু, এখন সব কিছু অনলাইন হওয়ায় সেই ধান্দায় পড়েছে ভাটা। তবে মামার কাছে থাকার সুবাদে কামাইয়ে রাস্তা আগেই রপ্ত করেছিল ভাগ্না। এখন সেই বিদ্যেই ভাঙিয়ে খাচ্ছে।
খুন হয়ে গিয়েছে শ্রীনু। শ্রীনুকে খুনের অভিযোগে রামবাবু ও তার সঙ্গীরা এখন জেলে। তাই ময়দান ফাঁকা। মামার পুরনো লোকজনকে জোগাড় করে খোলা মাঠে রাজত্ব চালাচ্ছে ভাগ্না। পাশে পেয়ে যায় শাসক দলের একাংশকে। পুলিসের নিচুতলাতেও গড়ে তুলেছে সখ্যতা। এখন তোলাবাজিই মূল ভরসা। কারবার টিকিয়ে রাখতে মামার নাম নিয়ে ধমকায়, চমকায়। তোলা না দিয়ে অকশনের মালে হাত দিতে গেলে বিপদে পড়তে হবে। কাজ হয় চমকানিতে। তোলার খাম পৌঁছে যায় ভাগ্নার কাছ।
ভাগ্নার কারবারের খবর পৌঁছেছে পুলিসের উপর মহলেও। এক পুলিস অফিসার ভাগ্নাকে থানায় ডেকে জানিয়ে দিয়েছেন, তোলাবাজি চলবে না। খড়্গপুরে ঢুকলে সোজা চালান করে দেব। সেই ধমকির পর শহর ছেড়েছে ভাগ্না। কিন্তু, মামার পুরনো লোকজনকে সামনে রেখেই মামার কারবারের সলতে জ্বালিয়ে রেখেছে ভাগ্না। পুলিসের দাপট কমার অপেক্ষায় রয়েছে রামবাবুর উত্তরসূরি।