নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: করোনার হাত থেকে বাঁচতে রাজ্য সরকারের ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের সাইকেলই বাহন হয়ে উঠেছে অভিভাবকদের। এখন স্কুল ছুটি। তাই ছাত্রছাত্রীদের সাইকেল তেমন দরকার হচ্ছে না। কিন্তু অফিস বা দূরে কোথাও যেতে হলে অভিভাবকরাই সেই বাহনের উপর ভরসা করছেন। জেলায় বাস বা অন্যান্য যানবাহন চালু হলেও সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই তা এড়িয়ে যেতে চাইছেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পে বিগত কয়েক বছরে প্রতিটি জেলাতেই বিপুল সংখ্যক সাইকেল রাজ্য সরকার দিয়েছে। বিগত আর্থিক বর্ষে শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদ জেলাতেই এক লক্ষ ২৫ হাজার সাইকেল দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সুদীপ্ত পোড়েল বলেন, স্কুল ছুটি থাকায় এখনও টার্গেট আসেনি। তবে আশা করা যায় গতবারের মতোই সাইকেল দেওয়া হবে।
জেলার বাসিন্দারা বলেন, বাস বা অন্য যানবাহনে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা খুব কঠিন। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাইরের রাজ্যগুলি থেকে বহু মানুষ জেলায় ফিরেছেন। তাই যানবাহনগুলিতে আক্রান্ত কেউ উঠছেন কিনা সেটাও আগাম বোঝা যায় না। তাই বিনা খরচে সাইকেলের মতো বাহন আর কিছু নেই। সংক্রমণের ঝুঁকিও নেই। উল্টে শারীরিক কসরত হয়। নসিপুরের বাসিন্দা গৌতম ঘোষ বলেন, করোনার আগে লালবাগ বা বহরমপুর ট্রেকারে বা অন্য কোনও কিছুতে চড়ে যেতাম। কিন্তু এখন যানবাহনে যেতে ভয় করে। মেয়ের সবুজসাথী প্রকল্পের সাইকেল চালিয়ে সব জায়গায় যাই। ও দশম শ্রেণীতে পড়াশোনা করে। স্কুল বা টিউশনি বন্ধ থাকায় এখন ওর সাইকেল দরকার হচ্ছে না। আগেও স্কুল ছুটির পর সাইকেল চালিয়ে মাঠে যেতাম। বহরমপুরের কাশিমবাজারের বিভাস প্রামাণিক বলেন, বাসস্ট্যান্ড বা গোরাবাজার যেতে হলে টোটো চড়ে যেতাম। আগে ঠেসাঠেসি করে গেলেও কোনও ভয় থাকত না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে গিয়েছে। রিজার্ভ করে একা যেতে হলে বাড়তি খরচ হয়ে যায়। তাই ছেলের সাইকেল চালিয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে যাই। স্কুল খুলে গেলে হয়তো আবার সাইকেল কিনতে হবে। এছাড়া এখন আর কোনও উপায় নেই। দূরের কোথাও যেতে হলে হয়তো ঝুঁকি নিয়ে যানবাহনে উঠতে হবে। কিন্তু কাছেপিঠে সাইকেল ঠিক আছে। প্রশাসনের দাবি, কোনও কোনও বাড়িতে দু’-তিনটি সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল রয়েছে। এই প্রকল্পের ফলে মুর্শিদাবাদ, মালদহ, পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলির গ্রামীণ এলাকার ছাত্রছাত্রীরা বেশি উপকৃত হয়েছে। এতদিন শহরের অনেক পড়ুয়ার সাইকেল দরকার না হলেও করোনার দৌরাত্ম্যে বাড়িতে থাকা সেই বাহন অভিভাবকদের কাছে ভরসা হয়ে উঠেছে। অটো বা টোটোতে না চড়ে শহরেরও অনেক সরকারি কর্মী সাইকেল চালিয়ে অফিসে যাচ্ছেন। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন বলেন, কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প। দলমত নির্বিশেষে সমস্ত বাড়ির ছেলে-মেয়েরা এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। এই প্রকল্পগুলির জন্য স্কুলছুটের সংখ্যা কমে গিয়েছে। সবুজ সাথী প্রকল্পে সাইকেল শুধু পড়ুয়ারা ব্যবহার করে না, তাদের পরিবারের লোকজনও তা চালাচ্ছেন। আগামী দিনেও আরও বহু পড়ুয়া এই সমস্ত প্রকল্পগুলির সুবিধা পাবে।