সুখেন্দু পাল বহরমপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদের মতো জেলাগুলিতে ১০০দিনের প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। স্থানীয়দের পাশাপাশি পরিযায়ী শ্রমিকরাও এই প্রকল্পের কাজ পাচ্ছেন। তবে যেসব পরিযায়ী শ্রমিকের হোম কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ শেষ হয়েছে তাঁদেরই কাজ দেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। সবাইকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলাগুলিতে এখন পুকুর কাটার কাজ বেশি চলছে। ওই তিনটি জেলা ছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪পরগনাতেও এই প্রকল্পে বিপুল শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে। বাঁকুড়ায় ২ লক্ষ ৮৪ হাজার ২২৫টি পরিবার এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পে কাজ দাবি করেছে। তারমধ্যে ২ লক্ষ ১০ হাজার ৭৫৯টি পরিবার ইতিমধ্যে কাজ পেয়েছে। এই জেলায় ৩৬ লক্ষ ৫৬ হাজার ৯৯৯টি শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে। ১০০ দিনের প্রকল্পে এর আগেও জেলার বহু ব্লকেই স্থায়ী সম্পদ তৈরি হয়েছে। মুর্শিদাবাদে ২৯ লক্ষ ৪১ হাজার ৪৮৯টি শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে। এই জেলায় প্রায় ২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন। তাঁরাও সমস্ত ব্লকেই কাজ দাবি করেছেন। এখনও এই জেলায় বিভিন্ন রাজ্য থেকে ফিরে ৪২ হাজার ৩৩৯ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। ১৪ দিন পর তাঁদেরও অনেকেই এই কাজের জন্য দাবি জানাতে পারেন বলে অনেকেই মনে করছেন। এই জেলায় ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৬০১টি পরিবার কাজ দাবি করেছে। ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭৫৫টি পরিবারকে কাজ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা শাসক(জেলা পরিষদ) সুদীপ্ত পোড়েল বলেন, আমাদের জেলায় ১০০ দিনের প্রকল্পে বিভিন্ন ধরনের কাজ হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ী সম্পদ তৈরি করা হচ্ছে। সেখান থেকেও শ্রমিকরা আগামী দিনে আয় করতে পারবেন। মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পে নওদা, মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ, বহরমপুর, ভগবানগোলা-১, সাগরদিঘি এবং নবগ্রাম ব্লকে এখনও পর্যন্ত ভালো কাজ হয়েছে। নওদায় ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ৮৪৭, মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লকে ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৫৮১, বহরমপুর ব্লকে ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭৮১টি শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে। ভিনরাজ্য থেকে ফেরা এক পরিযায়ী শ্রমিক বলেন, আবার কবে কাজের জন্য বাইরে যেতে পারব জানি না। এখানে পর্যাপ্ত কাজ পেলে করতে চাই। দ্রুত মজুরি দেওয়ার বিষয়টিও দেখতে হবে। সূতি-২, জলঙ্গি, সামশেরগঞ্জ, লালগোলা, হরিহরপাড়ার মতো ব্লকগুলি কাজে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে রয়েছে। তবে ওই এলাকাগুলিতেও কাজে গতি আনার জন্য জেলা থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই সমস্ত ব্লকগুলিতেও বহু শ্রমিক ফিরে এসেছেন।
রাজ্যে এখনও পর্যন্ত সাফল্যের নিরিখে মুর্শিদাবাদের পরেই রয়েছে বীরভূম জেলা। এই জেলায় ২৯ লক্ষ ২৬ হাজার ৯৮৮টি শ্রম দিবস তৈরি হয়েছে। এখানেও পুকুর কাটা সহ অন্যান্য কাজে জোর দেওয়া হয়েছে। বীরভূমে ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৮৬৮টি পরিবার কাজ চেয়েছে। তারমধ্যে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৪০৪টি পরিবার কাজ পেয়েছে। এই জেলাতেও মুরারই, নানুর দুবরাজপুর সহ বিভিন্ন ব্লকে পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরেছেন। তাঁদেরকে এখানেও কাজ দেওয়া হচ্ছে। অনেকে এখনও ট্রেনে, বাসে বা গাড়িতে জেলায় ফিরছেন। এক আধিকারিক বলেন, ১০০ দিনের প্রকল্পে কিছুদিন আগেই অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করা হবে বলে ঘোষণা হয়েছে। তার ফলে আশা করা যায় জেলাগুলিতে কাজের টার্গেটও বেড়ে যাবে। আরও বহু পরিবার কাজ পাবে। শ্রমদিবসও সব জেলাতেই বেড়ে যাবে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে ধরে রাখার জন্য এছাড়া আর কোনও রাস্তা ছিল না। এই মুর্হূতে উত্তরবঙ্গের কালিম্পং, দার্জিলিং গোর্খাহিল কাউন্সিল, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ বা দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান, হাওড়ার মতো কয়েকটি জেলা বাদ দিলে বাকি সব জায়গাতেই এই প্রকল্পে কাজ করার জন্য শ্রমিকদের ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে। কিন্তু বাকি জেলাগুলির এখন অনেকের হাতেই কাজ নেই। সেকারণে এই প্রকল্পে আসছে। ধান ঝড়াই বা পাট জমির কাজ শেষ হলে আরও অনেক শ্রমিক ১০০ দিনের কাজের দাবি জানাতে পারেন। তবে বাড়তি অর্থ এলে তাতে সমস্যা হবে না বলে আধিকারিকরা মনে করছেন।