পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
আপনার স্বামীর নাম কি সুরেশ প্রসাদ, দিল্লিতে কাজ করেন, সাত সকালে বাড়ি বয়ে এসে পুলিসের এই প্রশ্ন শুনে হতবাক হয়ে যান ২১বছর ধরে স্বামীর পথ চেয়ে বসে থাকা ঊর্মিলাদেবী। পুলিসের কাছে যখন শোনেন তাঁর স্বামী আসানসোলে ফিরে এসেছেন তখন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। ছোট ছেলে সুধীর প্রসাদকে নিয়ে পুলিসের সঙ্গে হাজির হন আসানসোলের ইএসআই হাসপাতাল চত্বরে থাকা কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। সুরেশবাবুর পায়ের কড়া দেখে নিজের স্বামীকে চিনতে পেরে তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। সুরেশবাবুও সেই মুহূর্তেই লক্ষ্য করেন, দু’দশক আগে একটি মেলায় স্বামীর নাম খোদাই করা উল্কি আজও অমলিন ঊর্মিলাদেবীর বাঁ হাতে। কিন্তু সুধীর? অবশেষে স্ত্রী জানালেন, দু’বছরের ছোট শিশুই আজ এত বড় হয়ে গিয়েছে। বাবাকে পেয়ে তখন আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিলেন না ছেলে।
কিন্তু কী হয়েছিল ২১ বছর আগে? ঊর্মিলাদেবী দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে বার্নপুরের শ্যামবাঁধে সংসার করছিলেন। হঠাৎই একদিন পারিবারিক অশান্তির জেরে স্বামী বাড়ি ছেড়ে চলে যান। বহু খোঁজাখুজির পরও তাঁর হদিশ মেলেনি। মন্দিরে মন্দিরে স্বামীর নামে পুজো দিলেও ফিরে আসেনি। এক সময়ে চোখের জল শুকিয়ে যায়। চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে মানুষ করতে থাকেন সন্তানদের। প্রথমদিকে শ্বশুর সংসার খরচ চালালেও তাঁর মৃত্যুর পর ১০বছর বয়সে নারকেল ফেরি করে সংসার চালিয়েছে ছেলে। তারই মাঝে ঊর্মিলাদেবীর বড় ছেলের মৃত্যু হয়। আট বছর আগে একটি মাত্র চিঠি এসেছিল দিল্লি থেকে। সেখানে লেখা ছিল ‘আমি ভালো আছি, আমাকে খোঁজার চেষ্টা করো না। বহু অভিমান জন্মেছিল স্ত্রীর মনে। ঠিক করেছিলেন ফিরে এলেও স্বামীর সঙ্গে কথা বলবেন না। কিন্তু এক মুহূর্তে সব অভিমান ভেসে গিয়েছে ভালোবাসার স্রোতে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লি থেকে ট্রেনে করে আসানসোলে নামেন ১৭ জন পরিযায়ী শ্রমিক। কিন্তু সুরেশবাবুর কাছে কোন পরিচয়পত্র না থাকায় পরিবারের নাম ঠিকানা জানতে চাওয়া হয়। তখনই তিনি উল্লেখ করেছিলেন তাঁর স্ত্রীর হাতে তাঁর নামে উল্কি রয়েছে। এরপরই কন্যাপুর ফাঁড়ির আইসি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় স্থানীয় থানার পুলিসের সহযোগিতায় ভেঙে যাওয়া পরিবারের মিলন ঘটান।