শরীর নিয়ে চিন্তায় থাকতে হবে। মাথা ও কোমরে সমস্যা হতে পারে। উপার্জন ভাগ্য শুভ নয়। ... বিশদ
গত ২০মে সুপার সাইক্লোন নন্দীগ্রামের বহু মানুষকে আশ্রয়হীন করে দিয়েছে। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের কেন্দেমারি জালপাই পঞ্চায়েতের মধ্যে রাজারামচক হাইস্কুলে ৫৩জন দুর্গত আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শ্যামাসুন্দরী গ্রামের ভানুচরণ লায়া, কেন্দেমারির প্রশান্ত প্রামাণিক ও রণজিৎ মণ্ডল, ভাসুরকাটা গ্রামের শেখ মোস্তাফা, রাজারামচক গ্রামের শেখ রবিউল প্রমুখ আছেন। কয়েকশো বাড়ি পুরোপুরি ধুলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। ওই ৫৩জনের বাড়িও সেই তালিকায় আছে। কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। তাই আপাতত ঠিকানা ত্রাণ শিবির। গোটা পঞ্চায়েত এলাকায় কোথাও বিদ্যুৎ নেই। ১৯টি জেনারেটরের সাহায্যে জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে পঞ্চায়েত।
একইভাবে নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া, কালীচরণপুর, গোকুলনগর এবং নন্দীগ্রাম-২ব্লকের বয়াল-১পঞ্চায়েত এলাকাজুড়ে শুধুই ধ্বংসাবশেষ। সোনাচূড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৪০টি সাবমার্সিবল পাম্প আছে। সাইক্লোনের তাণ্ডবে অর্ধেক পাম্প বিকল হয়ে গিয়েছে। কোথাও ট্যাঙ্ক উড়ে গিয়েছে আবার কোথাও পাইপ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত সাবমার্সিবল পাম্প মেরামতের কাজ চলছে। আপাতত ২৬টিকে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়েছে। জেনারেটরের সাহায্যে সেইসব পাম্প থেকে জল দেওয়া হচ্ছে। পিএইচই-র জলাধার থেকেও জল তুলে সরবরাহ করা হচ্ছে। সোনাচূড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কয়েকশো বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত। সোনাচূড়ার অসীম মণ্ডল, দেবব্রত প্রামাণিক, গাংড়া বালুপোতা গ্রামের দেবাশিস উত্থাসিনী, সঞ্জয় মান্না, সুমিত মণ্ডলদের এখন মাথার উপর ত্রিপলই ভরসা।
নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, বিডিও অফিস, থানা চত্বর এবং টেঙ্গুয়ার আংশিক এলাকা ছাড়া গোটা নন্দীগ্রাম টানা পাঁচদিন বিদ্যুৎহীন। প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্মীরা এখনও যেতে পারেননি। শ’য়ে শ’য়ে গাছ এখনও যেখানে সেখানে পড়ে রয়েছে। একই ছবি খেজুরিতেও। খেজুরি-২ব্লকের নীচকসবা এবং খেজুরি পঞ্চায়েত এলাকা যেন শ্মশানপুরী। নীচকসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের মসনদ-ই-আলা, দক্ষিণ কলাগেছিয়া, পাঁচুড়িয়া, মেহেদিনগর প্রভৃতি গ্রামে একটিও বাড়ি অক্ষত নেই। সমুদ্র উপকূলবর্তী ওইসব গ্রাম প্রকৃতপক্ষেই ছাড়খার হয়ে গিয়েছে। খেজুরি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কেদরাবাড়চক, সাতখণ্ড এবং সাহেবনগর গ্রামের ছবি দেখলে চোখে জল আসতে বাধ্য। ভাঙাচোর বাড়ির মধ্যেই একরাশ আতঙ্ককে সঙ্গী করে কোনও রকমে দিন কাটাচ্ছেন খেজুরি-২ব্লকের হলুদবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের দেখালি গ্রামের প্রদীপ পাত্র, খেজুরি-১ব্লকের বীরবন্দর গ্রাম পঞ্চায়েতের পুলঠা জগন্নাথচক গ্রামের অরবিন্দ কর সহ আরও অনেকেই।
লকডাউনে এমনিতেই দু’মাস স্তব্ধ নন্দীগ্রাম, খেজুরি। একেবারে বন্ধ মানুষজনের আয়ের রাস্তা। তার উপর ঝড়ের তাণ্ডবে দুই বিধানসভা এলাকায় ৮৫হাজার বাড়ি ভেঙে পড়ায় মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, নন্দীগ্রাম-১ব্লকে ১২হাজার, নন্দীগ্রাম-২ব্লকে ২৩হাজার, খেজুরি-১ব্লকে ২০হাজার এবং খেজুরি-২ব্লকে ৩০হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। এছাড়াও দুই বিধানসভা এলাকায় কৃষি এবং মাছচাষে ক্ষয়ক্ষতির তালিকাও দীর্ঘ। পিএইচই-র পাইপলাইনেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ভোগান্তি কাটবে না। কিন্তু, সেটার জন্য এখনও ঢের অপেক্ষা করতে হবে বলে বণ্টন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে। কারণ, খেজুরি সাপ্লাই এলাকায় ২২০০খুঁটি ভেঙে পড়লেও এখনও পর্যন্ত নতুন খুঁটি পাওয়া গিয়েছে মাত্র ৬৬টি। একই অবস্থা নন্দীগ্রামেও। তবে, দুর্যোগ সত্ত্বেও ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার আশায় রয়েছেন নন্দীগ্রাম ও খেজুরিবাসী। নন্দীগ্রাম-খেজুরির মানুষজনও বলছেন, একদিন সবকিছু স্বাভাবিক হবেই।