সংবাদদাতা, খড়্গপুর: উম-পুনের দাপটে সবংয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কেলেঘাই ও কপালেশ্বরী নদী সংলগ্ন এলাকায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। গাছ ভেঙে পড়ায় বহু এলাকায় স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। শুক্রবারও বহু এলাকায় বিদ্যুৎ আসেনি। ফলে, দেখা দিয়েছে পানীয় জলের সমস্যাও। এদিন বিধায়ক গীতারানি ভুঁইয়া, বিডিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, পুলিস ও প্রশাসনের আধিকারিক এবং জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন রাজ্যসভার সদস্য মানস ভুঁইয়াও।
একটা সময় সবংয়ের মানুষ ঝড় ও বন্যা নিয়ে বিব্রত থাকতেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসে কেলঘাই-কপালেশ্বরী সংস্কার করায় সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। ফলে প্রকৃতির রোষের মুখে পড়ে লড়াই করার অভ্যাসটা চলে গিয়েছিল। উম-পুনের জেরে ফের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন বাসিন্দারা। সাউথপাড়ার বাসিন্দা সনাতন মাইতি বলেন, আমার ৮০ বছর বয়স হল, এরকম ঝড় এর আগে কোনওদিন দেখিনি। আমরা বন্যা দেখিছি, তা মোকাবিলাও করেছি। কিন্তু, এই ঝড় বন্যার চেয়েও ভয়ঙ্কর। যেভাবে গাছ, বাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে, এরকম এর আগে হয়েছে বলে স্মরণে আসছে না।
নেধুয়ার হরিপদ পড়িয়া বলেন, অর্জুনগাছ ভেঙে পড়ায় আমাদের বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পলিথিন এনে কোনওরকমে ঢাকা দিয়ে বসবাস করছি। এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। চারদিকে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে আছে।
গাছ ভেঙে পড়ে বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খড়িকার বাসিন্দা তপন ঘোষদের আত্মীয় বাড়িতে গিয়ে উঠতে হয়েছে। তাঁর ছেলে বিপ্লব ঘোষ বলেন, ঝড় শুরু হতেই দূর থেকে গাছের ডাল উড়ে এসে ঘরে পড়ছিল। তখনই বিপদ বুঝে আমরা আত্মীয় বাড়ি চলে যাই। এক সময় কদম গাছ পড়ে মাটির বাড়িটা ভেঙে যায়। শুক্রবারও বিদ্যুৎ আসেনি। পানীয় জলও নেই।
বিডিও বলেন, বেশিরভাগ এলাকার এমন অবস্থা যে গ্রামে ঢোকা যায়নি। ড্রোনের সাহায্যে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬০০০ বাড়ি আংশিক ও প্রায় ৪০০ বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা গিয়েছে। দ্রুত সর্বত্র বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ চলছে। বিদ্যুৎ এসে গেলে পানীয় জল সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
মানসবাবু বলেন, চাউলকুড়ি, দশগ্রাম, সারতা, নারায়ণবাড়, বিষ্ণুপুর, মোহাড়, বুড়াল, ভেমুয়া পঞ্চায়েত এলাকায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। কয়েক হাজার গাছ ভেঙে পড়েছে। গাছ পড়েই বাড়িগুলির ক্ষতি বেশি হয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে, তার ছিঁড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সমস্ত দপ্তর কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমরা আয়লা দেখেছি। কিন্তু এই বীভৎসতা দেখিনি।