পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
বিহারের মুঙ্গের জেলার প্রচুর মানুষ এরাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে চাষের কাজে আসেন। সেখানকার তাঁড়ি গ্রামের বাসিন্দা অনিতাদেবীও তাঁর স্বামী, তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে রেখে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী-২ ব্লকের লক্ষ্মীপুর গ্রামে পেঁয়াজ তোলার কাজে এসেছিলেন। কিন্তু লকডাউনের জেরে তাঁরা কাটোয়া শহরে এসে আটকে পড়েন। তারপর থেকেই এই আটকে পড়া বিহারের শ্রমিকদের শহরের আরএমসি মার্কেটে রাখা হয়েছে। সেখানে কাটোয়া মহকুমা প্রশাসন এবং পুরসভার তত্ত্ববধানে বিহারের মোট ১৬০ জন পরিযায়ী শ্রমিক আছেন। মঙ্গলবার সকালে গ্রামে অনিতাদেবীর বড় মেয়ে আর্তি কুমারী(১৫) অসুস্থতার জেরে মারা যান। মোবাইলে মেয়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে অনিতাদেবী কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি মেয়েকে শেষ বারের মতো দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। কিন্তু লকডাউনের এই পরিস্থিতিতে মেয়ের শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার কোনও উপায় নেই। তাই হোয়াটস অ্যাপে ভিডিও কল করেন তাঁর স্বামী দেবানন্দ বিন্দ। মেয়েকে কাটোয়া থেকেই চোখের জলে শেষ বিদায় জানান মা।
এবিষয়ে কাটোয়া পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা এর আগেও ওই শ্রমিকদের বিহারে পাঠানোর জন্য দুটি বাস পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু বিহার সরকার ওদের সীমানা থেকেই ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। তবে আবার আমরা খুব শীঘ্রই ওদের আবার ফেরত পাঠাব।
জানা গিয়েছে, এদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিহার থেকে মেয়ের মৃত্যু সংবাদ আসে। কিন্তু মা শেষ পর্যন্ত মেয়ের কাছে যেতে পারলেন না। অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে অনিতাদেবী বলেন, আমার মেয়ে বারবার ফোন করে আমাকে ফিরে যেতে বলে। আমার জন্যই আমার মেয়ে মারা গেল। আমি এখান থেকে কীভাবে যাব। কে নিয়ে যাবে। আমার তিনটি মেয়ে। মেয়েদের বিয়ের জন্য টাকা জোগাড় করতে হবে। তাই ওদের গ্রামের বাড়িতে রেখে বাড়তি রোজগারের আশায় এখানে কাজে এসেছিলাম। আজ কার জন্য টাকা নিয়ে যাব। যে মেয়েকে জন্ম দিলাম, তার মৃতদেহ একটি বারের জন্যও চোখের দেখা দেখতে পেলাম না। মোবাইলে মেয়ের মরা মুখ দেখতে হল। সারাজীবনেও তো আর মেয়েকে ফেরত পাব না। লকডাউন আমার মেয়েকে কেড়ে নিল।
অনিতাদেবীর সঙ্গে কাজে আসা এক শ্রমিক উকিল কুমার বলেন, আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু মায়ের মন কি মানে? এখন কীভাবে বাড়ি ফিরব বুঝতে পারছি না।
মুঙ্গেরের বাসিন্দা সুনীতাদেবী বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের রেখে এসেছি। কাজও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এভাবে আটকে পড়ব বুঝতে পারিনি। এখন পরিবারের লোকজন কীভাবে দিন কাটাচ্ছে তা ভেবেই চিন্তা হচ্ছে।