পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
কাটোয়া শহরের যুবক দিলীপ চৌধুরীর বাড়িতে অসুস্থ বাবা ও অন্যান্য সদস্যদের কথা চিন্তা করে শুধুমাত্র ডাল, রুটি খেয়েই অসম থেকে টানা আটদিন হেঁটে অবশেষে বাড়ি ফেরায় হতবাক প্রতিবেশীরাও। হাজার মাইল পায়ে হেঁটে অসম থেকে কাটোয়া ফেরার দুঃসাহসিক অভিযানের কাহিনীও ভয়ঙ্কর।
দিলীপবাবু কাটোয়া শহরের একটি ট্রান্সপোর্টের লরির খালাসির কাজ করেন। লকডাউন ঘোষণার আগে দিলীপবাবু ও লরিচালক রথীন দাস কলকাতা থেকে করগেট টিন নিয়ে অসম পাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্তু, অসমে গিয়ে লরি থেকে করগেট নামানোর পরই করোনার প্রকোপ রুখতে আচমকা দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে দিলীপবাবুর সঙ্গে হাত খরচের টাকা চাওয়া নিয়ে লরিচালক রথীন দাসের কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরেই রাগ করে জিনিসপত্র গুটিয়ে লরি থেকে নেমে দিলীপবাবু চলে যান সোজা স্টেশনে। কিন্তু, লকডাউনের জেরে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্টেশন থেকে আরপিএফ দিলীপবাবুকে চলে যেতে বলে। এরপর আর কোনও কিছু না ভেবে দিলীপবাবু হেঁটেই বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।
দিলীপবাবু বলেন, বাবা আগে রিকশ চালাতেন। কিন্তু, এখন অসুস্থ হয়ে বাড়িতেই থাকেন। মায়েরও বয়স হয়েছে। লকডাউনের জেরে অসমে আটকে পড়লে আমার পরিবার কীভাবে খেত? তাই হেঁটে বাড়ি ফেরা ছাড়া আর অন্য কোনও রাস্তা ছিল না।
সুদূর অসম থেকে কাটোয়া শহর কম রাস্তা নয়। দিলীপবাবু জানান, প্রথমে অসম থেকে হেঁটে কোকড়াঝোড় জেলার শ্রীরামপুর গেট পার করে বারোবিশা আসেন। তারপর সেখান থেকে আলিপুরদুয়ার। সেখানে রাস্তা ভুল করে হাসিমারা জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকেন। কিন্তু, হাসিমারা জঙ্গলে হাতি হানার ভয়ে জিজ্ঞাসা করে অন্য রাস্তা দিয়ে এসে এক মন্দিরের ধর্মশালায় আসেন তিনি। সেখানে রুটি ও ডাল খেয়ে মন্দির ছাড়েন। এরপর শিলিগুড়ি হয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফরাক্কা চলে আসেন। তারপর বাদশাহী রোড ধরে ফুটিসাঁকো হয়ে বাড়ি ফেরেন।
অন্যদিকে কেতুগ্রাম-১ ব্লকের কাঁদরা অঞ্চলের উজালপুর গ্রামের যুবক আজিজ শেখ উত্তরপ্রদেশ থেকে হেঁটে বাড়ি ফেরেন। রুটি কারখানার কর্মী আজিজ সাহেব লকডাউন ঘোষণার পর ২৯ মার্চ হাঁটা শুরু করেন। তবে, কিছুটা পথ অবশ্য তিনি ছোটহাতি গাড়িতে এসেছেন। আজিজ শেখ বলেন, লকডাউনের পর আমাদের কারখানাও বন্ধ হয়ে যায়। কাজ নেই, খাবার পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে হাঁটতে শুরু করি। কিছুটা রাস্তা গাড়ি ভাড়া করে এলেও বেশিরভাগ রাস্তা দিন-রাত হেঁটেই ফিরেছি। ঝাড়খণ্ডে ঢুকতেই সেখানকার পুলিস তাড়া করে। বাড়িতে বাবা মারা গিয়েছেন। আমার উপরেই সব ভরসা। তাই হাঁটা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।