রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, মৃত আমাদের দলেরই কর্মী। এই ঘটনার পিছনে বিজেপির উস্কানি রয়েছে। আমাদের কর্মীদের অনুরোধ, এই পরিস্থিতিতে কেউ কারও প্ররোচনায় পা দেবেন না। সরকারকে সাহায্য করুন, লকডাউন মানুন।
প্রসঙ্গত, শনিবার তালিব গ্রামের গার্লস স্কুলের হস্টেলে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খোলা নিয়ে গণ্ডগোল হয়। প্রথমদিকে পুলিস মিটমাট করে দিলেও সন্ধ্যার পর সেখানে উত্তেজনা ছড়ায়। গ্রামের দু’পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি ও গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। বোমার আঘাতে নাসিরুদ্দিনের মৃত্যু হয়।
রবিবার ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, মৃত নাসিরুদ্দিনের বাড়ির বাইরে দেওয়ালে বোমার বারুদের চিহ্ন। এক চিলতে খড়ের ছাউনির বাড়িতে তাঁর পরিবার থাকে। তাঁরা চার ভাই। নাসিরুদ্দিনই বড়। তাঁর দেড় বছরের একটি ছেলে রয়েছে। পরিবার ও বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, নাসিরুদ্দিন তৃণমূল কর্মী ছিলেন। সেজন্য বরাবরই প্রতিবাদীও ছিলেন। গ্রামে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খোলা নিয়ে অন্যান্যদের সঙ্গেই নাসিরুদ্দিনও তার আপত্তি জানান। এর আগেও একাধিকবার নানা বিষয়ে প্রতিবাদ করেছেন তিনি। দলের অন্দরে মত পার্থক্যের জেরে প্রতিবাদ করতে গিয়ে কোণঠাসাও হয়ে গিয়েছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খোলায় আপত্তির জেরে শনিবার বিকেলে কয়েকজনের মধ্যে ঠেলাঠেলি হয়। পুলিস সেই সময় বিষয়টি মিটিয়ে দেয়। আলোচনা করে বিষয়টি মেটাতে গ্রামের প্রবীণদের নিয়ে দশজনের একটি কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়। কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যায় দলের কয়েকজন নেতার উপস্থিতিতে সেখানে গণ্ডগোল হয়। তখনই উভয়পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি হয়। গুলিও চলে বলে অভিযোগ। এমনকী, পাল্টা একটি দোকানে ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। লকডাউনের পরিস্থিতিতে এই ধরনের হিংসার ঘটনায় জেলাজুড়েই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এদিন সকাল থেকেই ওই গ্রামে পুলিস পিকেটিং করা হয়। যদিও এদিন সকালে সেখানে ফের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পুলিসের দাবি, গ্রাম্য বিবাদের জেরে গণ্ডগোল হয়েছে।
মৃতের বাবা শেখ সরিফ বলেন, এক শরিক আমাদের জমির রেকর্ড করে নেয়। সেই নিয়ে গণ্ডগোল ছিল। ছেলে প্রতিবাদ করেছিল। তার জেরে হুমকিও দেয়। শনিবার গ্রামের নেতাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তারাই আমার ছেলেকে মেরে ফেলল।
তবে পুলিস সূত্রে খবর, নাসিরুদ্দিন তৃণমূল করলেও বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ছিলেন। তার জেরে ঠান্ডা লড়াই ছিলই। কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খোলাকে ইস্যু করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গণ্ডগোল হয়। এই ঘটনায় পুলিস দু’পক্ষের সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে আপাতত সেখানকার নেতারা পলাতক রয়েছে। তৃণমূলের সিউড়ি-২ ব্লক সভাপতি নুরুল ইসলাম অবশ্য বলেন, কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খোলা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল হয়েছে। এই ঘটনায় রাজনীতি বা দলের কোনও সম্পর্ক নেই। বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, এই গ্রামে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গণ্ডগোলের জেরে বোমাবাজি হয়েছে। এর সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজ আলি, আফসার আলি বলেন, শ্যামবাবু তৃণমূলের হয়ে কাজ করলেও বর্তমানে দল থেকে ব্রাত্য হয়ে গিয়েছিলেন। তাই কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খোলা নিয়ে আপত্তি জানালে তা ভালো চোখে নেননি পদাধিকারীরা। তার জেরে গ্রামে অশান্তি হয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, তালিব গ্রামে পোস্ট অফিস, রেশন দোকান, ব্যাঙ্ক প্রভৃতি রয়েছে। ফলে এই গ্রামে অন্য এলাকা থেকেও লোকজনের যাতায়াত রয়েছে। তাই কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খোলা হলে সংক্রমণের আশঙ্কা ছিল। সেজন্যই গ্রামবাসী আপত্তি তুলেছিলেন। ব্লক প্রশাসন অবশ্য সেখানে সেন্টার না খোলার ব্যাপারে আশ্বাস দেয়।