খরচের চাপ এত বেশি থাকবে সে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা ... বিশদ
এদিন সকাল থেকেই বাঁকুড়ার মেজিয়া-বড়জোড়া শিল্পাঞ্চল থেকে শুরু করে জেলা সদর বা জঙ্গলমহলের কোথাও কোনও দোকানপাট খোলা ছিল না। শিল্পাঞ্চলের সমস্ত পণ্যবাহী যানবাহনগুলিকে লক ডাউন করে দেওয়া হয়। বন্ধ ছিল বেসরকারি বাস পরিষেবা। সরকারি বাস চললেও তা ছিল হাতেগোনা। বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলেও কোনও কারখানা থেকে উৎপাদিত দ্রব্য বের হয়নি। মেজিয়া শিল্পাঞ্চলের চেহারা ছিল একবারে শুনশান।
এদিন জেলায় করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বানে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গিয়েছে। সকাল থেকেই রাস্তাঘাট, হাটবাজার সব ছিল জনমানব শূন্য। রাস্তায় কোনও জন প্রাণীর দেখা মেলেনি। বাঁকুড়া সদর সহ তালডাংরা, বিষ্ণুপুর, সোনামুখী, কোতুলপুর ছাতনা, শালতোড়া, বেলিয়াতোড়, সিমলাপাল, রাইপুর, জয়পুর, খাতড়া, রাইপুর, রানিবাঁধ, সারেঙ্গা, সিমলাপাল, বড়জোড়া, ইন্দাস, পাত্রসায়র, সর্বত্রই একই চিত্র ধরা পড়েছে। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বাঁকুড়ার গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ড, পুয়াবাগান, ধলডাঙা, সতীঘাট, কেরানিবাঁধের মতো ব্যস্ততম বাস স্টপেজগুলিতে কোনও যাত্রী ছিল না। শনিবার রাত থেকে দক্ষিণ পূর্ব রেলের আদ্রা-খড়্গপুর ডিভিশন সমস্ত ট্রেন বাতিল করার কারণে বাঁকুড়া স্টেশনও ছিল যাত্রী শূন্য। একই ছবি দেখা যায় ছাতনা, বিষ্ণুপুর, সোনামুখী, ঝাঁটিপাহাড়ি, ওন্দা, প্রভৃতি স্টেশনে। জনতা কার্ফু পালনে বাঁকুড়াবাসী স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেওয়ায় অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাঁকুড়ার সংসদ সদস্য সুভাষ সরকার।
জনতা কার্ফুর জেরে এদিন সকাল থেকেই বিষ্ণুপুর শহর সহ গোটা মহকুমা এলাকা কার্যত বনধের চেহারা নেয়। এদিন দিনভর শহরের রাস্তাঘাট ছিল শুনশান। অধিকাংশ দোকান বন্ধ। হাট বাজারের ঝাঁপও খোলেনি। কোনও যানবাহন না চলায় শহরের রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডও ছিল শুনশান। দু’একটি সরকারি বাস চললেও তাতে যাত্রীর দেখা পাওয়া যায়নি। সোনামুখী শহরেও একই ছবি দেখা যায়। এছাড়াও মহকুমার জয়পুর, কোতুলপুর, ইন্দাস ও পাত্রসায়র ব্লক এলাকাতেও দোকানপাট বন্ধ ছিল। গ্রামের দিকেও এদিন চাষিদের মাঠে নামতে দেখা যায়নি। সব মিলিয়ে জনতা কার্ফুতে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেখা গিয়েছে।
বাঁকুড়ার মতো জনতা কার্ফুতে পুরুলিয়া জেলাজুড়েও ব্যাপক সাড়া পড়ে। এদিন সকাল থেকেই পুরুলিয়া শহরের বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত বাজার ছিল জনমানবহীন। এদিন পুরুলিয়া শহরের দু-একটি মুরগি মাংসের দোকান এবং চায়ের দোকান ছাড়া আর কিছুই খোলা ছিল না। মাংসের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় ছিল। অনান্য দিন ভিড়ে থিকথিক করা পুরুলিয়া শহরের বড়হাটে গোটা বাজারে মাত্র একজন মাছ বিক্রেতা ছাড়া কেউ ছিলেন না। তবে এদিন শহরের বেশকিছু এলাকায় বাইকআরোহী কিছু যুবক শহরে ঘুরতে বের হয়। শহরের রথতলা এলাকায় আবার কয়েকজন খুদে রাস্তার উপরেই ক্রিকেট খেলা শুরু করে। তবে শুধুমাত্র পুরুলিয়া শহর নয়, জেলার অন্যান্য প্রান্তের চিত্রটিও ছিল প্রায় একইরকম। এদিন রাস্তায় কোনও বেসরকারি বাস চলাচল করেনি। ছোট গাড়িও রাস্তায় তেমন দেখা যায়নি। বিভিন্ন ব্লক এলাকার বাজারগুলিও ছিল সম্পূর্ণ বন্ধ। অন্যদিকে, এদিন ঝালদা শহরের রাস্তাঘাট থেকে দোকানবাজার ছিল কার্যত জনমানবহীন।
পাশাপাশি আরামবাগেও এদিন সকাল থেকে রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল। হাতেগোনা কয়েকটি সরকারি বাস চলাচল করলেও তাতে যাত্রী সংখ্যা ছিল নগণ্য। জনতা কার্ফুর জেরে এদিন কার্যত বনধের চেহারা নেয় আরামবাগ মহকুমা। শহরের ব্যস্ততম লিঙ্ক রোডেও এদিন যানবাহনের দেখা মেলেনি। আরামবাগ, গোঘাট, মায়াপুর রেলস্টেশন ছিল সম্পূর্ণ স্তব্ধ। শহরের প্রাণকেন্দ্র হাসপাতাল মোড় সংলগ্ন এলাকায় হাতেগোনা দু’-একটি ওষুধের দোকান খোলা থাকলেও অন্যান্য দোকানপাট খোলেনি। শহরের বেশ কিছু এলাকায় স্থানীয় যুবকদের রাস্তাতেই ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে গোটা আরামবাগ অঘোষিত বনধের চেহারা নেয়। বিকেল ৫টার পর বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে শহরের বাসিন্দারা হাততালি, থালা বাসন ও ঘণ্টা বাজিয়ে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক, নার্স, সাংবাদিকদের সম্মান জানান।