খরচের চাপ এত বেশি থাকবে সে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা ... বিশদ
বীরভূমের জেলা সদর সিউড়িতে অন্যদিনের পাশাপাশি রবিবারও মূল রাস্তায় ব্যাপক যানজট থাকে। কিন্তু, এদিন জনতা কার্ফুতে ছবিটা ছিল অন্যরকম। শহরের সব রাস্তাই কার্যত ফাঁকা ছিল। দোকানের ঝাঁপও ছিল বন্ধ। পেট্রল পাম্প অবশ্য খোলা ছিল। সেখান থেকে কিছু ব্যক্তিকে পেট্রল নিতেও দেখা যায়। রাস্তায় কিছু সরকারি বাস দেখা গেলেও তাতে যাত্রী ছিলই না বলা যায়। তবে, পুলিসের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দেখা যায়। এমনকী, সিউড়ি শহরের কিছু জায়গায় অনেককে তাস বা ক্যারাম খেলতেও দেখা যায়। তাঁরা জনতা কার্ফু উপেক্ষা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে জমায়েত করেন। তা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সিউড়ি মহকুমার সাঁইথিয়া শহরও ছিল কার্যত ফাঁকা। জেলায় সাঁইথিয়াকে বাণিজ্যিক শহর বলা হয়ে থাকে। কিন্তু, সেখানেও এদিন ব্যবসায়ীদের সেই চেনা ছবিটি দেখা যায়নি। রাস্তাঘাট কার্যত শুনশান ছিল। সাঁইথিয়া স্টেশনও ছিল ফাঁকা। দুবরাজপুর শহরও কার্যত জনতা কার্ফুতে সাড়া দিয়েছে। সেখানেও বাসিন্দারা করোনা রুখতে সচেতন হয়েছেন। অনেকেই বলছেন, করোনা ভাইরাস রুখতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় সব মহলের মানুষ সাড়া দিয়েছেন। সেইজন্য ঘোষণা মতোই ধন্যবাদ জ্ঞাপন কর্মসূচিতে শঙ্খ বাজিয়েছেন।
এদিকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা বন্ধকে ছাপিয়ে গেল জনতা কার্ফু। চেনা ব্যস্ততার সামান্যতম চিহ্ন নেই রামপুরহাট মহকুমায়। দোকানপাট ছিল বন্ধ। শহরের রাস্তা থেকে জাতীয় সড়ক শুনশান। তবে, মাঝে মধ্যে সরকারি বাসের দেখা মিললেও ছিল না কোনও যাত্রী। রামপুরহাট, মুরারই, নলহাটি, রাজগ্রাম সর্বত্র স্টেশনে যাত্রী সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। রবিবার দিনের শুরু থেকেই এমনই ছবি ধরা পড়ল। ক্রমশ বেড়ে চলা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে এদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জনতা কার্ফু পালন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আপামর দেশবাসীর কাছে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি থাকার আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। সেই আবেদনে সাড়াও মিলেছে। এদিন সকাল থেকে রামপুরহাটের রাস্তাঘাট ছিল জনমানব শূন্য। রাজনৈতিক দলের ডাকা বন্ধে দু’-একটা দোকান খোলা থাকলেও এদিন সর্বত্র বন্ধ ছিল। সকালে এক কাপ চায়ের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেও পাননি কেউ। যানজটের শহরে সব মানুষ যেন উধাও হয়ে যায়। যে জাতীয় সড়কে যানজট রোজনামচা, সেই সড়ক ছিল শুনশান। মাঝে মধ্যে সরকারি বাস চললেও তাতে কোনও যাত্রী ছিল না। একইভাবে শহরের প্রাণকেন্দ্র হাটতলাও ছিল জনশূন্য। ফুটপাত সহ সমস্ত স্থায়ী দোকানপাট ছিল বন্ধ। রামপুরহাট স্টেশনে ব্যস্ত মানুষের ভিড়ও ছিল না। রবিবারের বিভিন্ন ঠেকে আড্ডা দেওয়া যুবকরাও এদিন গৃহবন্দি হয়ে কাটিয়েছেন। খুব প্রয়োজনে যাঁরা রাস্তায় বেরিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যেও ঘরে ফেরার তাড়া লক্ষ্য করা গিয়েছে। ফোনে এক সরকারি কর্মী সমর পাল বলেন, জনতা কার্ফুকে সতকর্তামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা উচিত। বাড়িতে থাকলে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো অনেকটাই সম্ভব হবে। বিশেষ করে নতুন করে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে না। সবমিলিয়ে জনতা কার্ফুতে জনতা তাঁদের সচেতনতার পরিচয় দিলেন।
অন্যদিকে, বোলপুর শহরজুড়ে ও বাকি মহকুমায় জনতা কার্ফুতে মানুষের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেল। এদিন সকাল থেকে শহরের রাস্তায় সেভাবে দেখা যায়নি যানবাহন। প্রতিদিনের ব্যস্ত রাস্তাগুলি ছিল একেবারেই ফাঁকা। সমস্ত দোকানপাট বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। চারিদিক শুনশান। তবে, বেলা একটু বাড়তেই কিছু উৎসাহী মানুষ বন্ধের পরিবেশ দেখতে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন। তাঁরা কিছুক্ষণ ঘোরাফেরার পর সবকিছু বন্ধ দেখে বাড়ি ফিরে যান।
প্রতিদিনের যে চেনা ব্যস্ত ছবিটা বোলপুর শহরজুড়ে দেখা যায় তা এদিন একেবারে উধাও। যে ক’জন মানুষ বাইরে বেরিয়েছিলেন তাঁরাও বলছেন, এমন ফাঁকা রাস্তাঘাট কোনও রাজনৈতিক দলের ডাকা বন্ধের দিনও হয়নি। বোলপুর স্টেশন রোড শহরের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা। চৌরাস্তা থেকে স্টেশন পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তা যেতে দিনের যে কোনও সময়ে ১৫-২০ মিনিট লেগে যায়। কিন্তু, এদিন সেই রাস্তাও একেবারে ফাঁকা। পাশাপাশি বোলপুর-লাভপুর রাস্তায় কিছু ছেলেকে দেখা গেল ফুটবল খেলতে। অন্যদিকে, শান্তিনিকেতনের ছবিটাও একই। চারিদিক একেবারে ফাঁকা।