বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এদিন সকাল থেকেই বর্ধমান শহরের ছবি ছিল একেবারে নির্জন দ্বীপের মতো। শহরের সমস্ত দোকানপাট ছিল বন্ধ। রাস্তায় তেমন মানুষজনও বের হননি। হাতে গোনা দু’চারজনকে রাস্তায় দেখা গিয়েছে। শহরের ২ নম্বর জাতীয় সড়কে অন্যদিন গাড়ির লম্বা লাইন থাকলেও এদিন জনতা কার্ফুতে গাড়ি ছিল একেবারে কম। অনেকে বলছেন, বন্ধ হলেও এমন নির্জন ছবি দেখা যায় না। একেবারে শুনশান। বেসরকারি সমস্ত বাস বন্ধ ছিল। সরকারি বাস দু-একটি চললেও তাতে যাত্রী ছিল দু-তিনজন। বাসস্ট্যান্ড থেকে স্টেশন সর্বত্রই শুনশান চিত্র। এদিন কালনার সমস্ত বাসস্ট্যান্ডের চিত্র ছিল একইরকম শুনশান। এমনকী ফেরিঘাটগুলিও কার্যত ছিল জনশূন্য।
এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে জনতা কার্ফুতে গোটা কাটোয়া ও দাঁইহাট শহর সহ মহকুমাজুড়ে কার্যত বন্ধের চেহারা নেয়। জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত এবং হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কেউই এদিন বাড়ি থেকে বের হয়নি। কাটোয়া শহরের ব্যস্ততম এলাকা কাছারি রোড, স্টেশন বাজার, গোয়েঙ্কা মোড়, পুরসভা মোড় প্রভৃতি এলাকাগুলিতে দোকানপাট, বাজার সর্বত্রই বন্ধ ছিল। পাশাপাশি বাস পরিষেবাও এদিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। কাটোয়া, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট সহ বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকাগুলিতেও এদিন রাস্তাঘাট সর্বত্রই জনমানব শূন্য ছিল। গোটা শহরজুড়ে পুলিসি টহল ছিল। ভিড় বা জমায়েত দেখলেই পুলিস তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
কাটোয়া স্টেশন ম্যানেজার অরূপ সরকার বলেন, কাটোয়া থেকে হাওড়াগামী দুটি লোকাল ট্রেন এবং কাটোয়া থেকে আজিমগঞ্জ শাখার সমস্ত ট্রেনই এদিন বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। তার বদলে গরিব রথ এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে সমস্ত স্টেশনেই স্টপেজ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, জনতা কার্ফুতে সাড়া দিল পশ্চিম বর্ধমানের বাসিন্দারা। রবিবার সকাল থেকেই জেলার সব স্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ড শুনশান ছিল। করোনা আতঙ্কে কার্যত গৃহবন্দি হয়ে কাটালেন শিল্পাঞ্চলবাসী। তবে, প্রধানমন্ত্রীর ডাকে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কারখানা বন্ধ থাকলেও ব্যতিক্রমী ভূমিকা নিল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থা ইসিএল। তাদের কোলিয়ারিতে যথারীতি কাজ হল, একসঙ্গে কর্মীদের নিয়ে ঢুলি ওঠানামা করল। ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ন্যূনতম উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি কর্তৃপক্ষকে। তবে রাজ্যের লকডাউনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে পশ্চিম বর্ধমানে বেশিরভাগ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
জনতা কার্ফুর ব্যাপক প্রভাব পড়ে জেলায়। যেহেতু অধিকাংশ ট্রেনই চলেনি তাই আসানসোল, দুর্গাপুর, রানিগঞ্জ, অণ্ডাল, পানাগড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলি ছিল কার্যত যাত্রীশূন্য। তবে হাতে গোনা যে কয়েকজন যাত্রীকে দেখা গিয়েছে, তাঁদেরও বসতে দেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ। একই অবস্থা ছিল আসানসোলের প্রাণকেন্দ্র আসানসোল বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। যে হটনরোড, জিটি রোড যানজটে পরিপূর্ণ থাকে, এদিন সেই সব রাস্তাই ছিল জনমানব শূন্য। আসানসোল বাসস্ট্যান্ডে লাইন দিয়ে বেসরকারি বাস দাঁড়িয়ে থাকলেও তা চলাচল করেনি। সরকারি বাস চললেও যাত্রী ছিল না। একই অবস্থা ছিল দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার, স্টেশন, বেনাচিতি বাজারে। জনবহুল এই এলাকা শুনশান থেকেছে। তবে, ব্যতিক্রম কোলফিল্ড এলাকা। নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করেই চলছে উৎপাদন। যা থেকে সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিন কানাডা থেকে আসা আসানসোলের এক যুবতীর সঙ্গে চেন্নাইয়ের এক বাসিন্দার বিয়ে হয়। রাতে এলাহি রিসেপশনের আয়োজন করা হলেও শেষ মূহূর্তে তা বন্ধ করা হয়েছে।
এদিকে, ব্যবসা বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগতই জানিয়েছে এই শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। তবে সোমবার দোকান খোলার পর কী পরিস্থিতি হবে তা নিয়ে অনেকেই আতঙ্কিত। অনেকেরই আশঙ্কা পুলিস সক্রিয় না হলে কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা যেতে পারে। এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।