গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
পুলিস ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ছাত্রের নাম দীপ মণ্ডল(১৮)। তাঁর বাড়ি মল্লারপুর থানার তারাপুর গ্রামে। তিনি মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা লপসা হেমব্রম কলেজের বিএ ও ময়ূরেশ্বর-১ ব্লকের আইটিআই কলেজের ইলেক্ট্রিসিয়ান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। শনিবার ওই ছাত্র তারাপুর থেকে বাস ধরে রামপুরহাটের মনসুবা মোড়ে নামেন। সেখান থেকে বুধিগ্রাম রুটের বেসরকারি বাস ধরে তারাপীঠের জয়সিংহপুর গ্রামে টিউশন পড়তে আসছিলেন। মৃত ছাত্রের বন্ধু তথা অভিযোগকারী দেবরঞ্জন দে বলেন, দীপের আসতে দেরি হওয়ায় আমরা টিউশন পড়তে শুরু করি। সকাল ১০টা ১৫ মিনিট নাগাদ দীপ আমাকে ফোন করে জানায় ভাড়া নিয়ে কন্ডাক্টরের সঙ্গে ঝামেলা হচ্ছে। আমি তাকে বাস থেকে নেমে যেতে বলি। মিনিট ১৫ পর সে আবার ফোন করে বলে তুমুল ঝামেলা হচ্ছে। আমরা সেইমতো টিউশন ছেড়ে জয়সিংহপুর মোড়ের দিকে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করি। ইতিমধ্যে ১০টা ৪০ মিনিট নাগাদ পুলিস এসে জানায়, জয়সিংহপুর মোড়ে দীপের দুর্ঘটনা হয়েছে। তাকে তারাপীঠের তারাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেইমতো আমরা তারাপুর হাসপাতালে গেলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেখান থেকে তাকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। বিকেল নাগাদ সেখানেই তার মৃত্যু হয়। তাঁর দাবি, ভাড়া নিয়ে বচসার জেরে দীপকে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিয়ে বাস নিয়ে চলে যায় কন্ডাক্টর।
জানা গিয়েছে, মনসুবা মোড় থেকে জয়সিংহপুর পর্যন্ত বাসের ভাড়া ১০টাকা। ওই ছাত্র অর্ধেক ভাড়া দিচ্ছিলেন। কিন্তু, বাসের কন্ডাক্টর আট টাকা দাবি করেন। এই নিয়েই তাঁদের মধ্যে ঝামেলা হয়।
এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পেশায় নার্সারি ব্যবসায়ী বাবা অখিল মণ্ডল। একইভাবে ঘনঘন মূর্ছা যাচ্ছেন মা মুনমুন মণ্ডল। অখিলবাবু বলেন, ছেলে আইটিআই পাশ করে চাকরি করবে বলে আশা করেছিল। আমার সব শেষ হয়ে গেল। তিনি বলেন, ছেলে আমাকে খুব ভয় পেত। শনিবার হাসপাতালে তাকে দেখতে গেলে সে ভয়ে বলে, বাস থেকে নামতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটেছে। পরে জানতে পারি ছেলেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এত নির্মম কী করে হতে পারল কন্ডাক্টর?
মৃতের মামা দেবপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, ভাড়ায় সন্তুষ্ট না হলে মাঝ রাস্তায় বাস দাঁড় করিয়ে ভাগ্নাকে নামিয়ে দিতে পারত। তিনি বলেন, ভাগ্নার কোমরের হাড় কয়েক টুকরো হয়ে যায়। হাত ও পায়ের একাধিক জায়গায় ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। আমরা অভিযুক্ত কন্ডাক্টরের শাস্তির দাবি করছি।
যদিও এই নিয়ে কন্ডাক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে, বাসমালিক হাসিবুর রহমান বলেন, ঠেলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। ভাড়া চেয়েছিল কন্ডাক্টর। ওই ছাত্র ওয়ান থার্ড ভাড়া দেব বলেছিল। কন্ডাক্টর হাফ ভাড়া দাবি করেছিল। এই নিয়ে বচসা হয়। পরে ওই ছাত্র চলন্ত বাস থেকে নেমে পড়ে গিয়ে জখম হয়।
এদিকে অভিযোগকারীর দাবি, যদি ওই ছাত্র নিজে থেকেই নেমে পড়ে জখম হয়, তাহলে বাসটি কেন দাঁড়াল না? কেন জখম যাত্রীকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হল না? উত্তরে বাসমালিক বলেন, যদি ওখানে বাস দাঁড়াত, তাহলে চালক ও কন্ডাক্টরকে স্থানীয়দের রোষের মুখে পড়ত হতো। তবে, একটু এগিয়ে বাস দাঁড় করিয়ে পুলিসকে খবর দেওয়া হয়েছিল।
রবিবার ময়নাতদন্তের পর দুপুরে ওই ছাত্রের মৃতদেহ গ্রামে পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে। গ্রামবাসীরা বলেন, শান্ত স্বভাবের দীপ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করেছিলেন। তাঁর এই পরিণতিতে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা গ্রাম। যদিও অশান্তির আশঙ্কায় এদিন বাসটি রুটে চলাচল করেনি।