বিএনএ, আরামবাগ: আরামবাগে দলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে গঠিত হল বিজেপি বাঁচাও কমিটি। বিজেপির জেলা সাংগঠনিক সভাপতির বিরুদ্ধে বুধবার ফের গোপনে বৈঠক করলেন দলের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। জেলা সাংগঠনিক সভাপতির অপসারণের দাবিতে শতাধিক কর্মীর সই করা অভিযোগপত্র রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আদি বিজেপি কর্মীরা। পুরসভা ভোটের আগে এনিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে গেরুয়া শিবির।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন আরামবাগ শহরের গোপন একটি ডেরায় বিজেপির প্রায় ২০জন আদি নেতা বৈঠক করেন। বৈঠকে অভিযোগ উঠে, দলে থেকে বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ দল বিরোধী কাজ করছেন। সেই কারণেই তাঁকে ওই পদ থেকে সরাতে হবে। এনিয়ে ইতিমধ্যেই বিক্ষুব্ধ কর্মীরা একটি কোর কমিটি তৈরি করেছেন। ওই কমিটির মাধ্যমে বিমানবাবুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের ও দল বিরোধী কাজের পুঙ্খানুপুঙ্খ খতিয়ান তৈরি করা হবে। তারপর তা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে পাঠানো হবে।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন এক বিজেপি নেতা বলেন, বিমানবাবু দলে থেকে দলের বিরুদ্ধাচারণ করছেন। দলের মধ্যে একক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছেন। পুরনো দিনের কর্মীদের তিনি গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। আমরা বহুদিনের বিজেপি কর্মী। সেই কারণে বিজেপিতে থেকে বিমানবাবুর ওই কার্যকলাপ আমরা মেনে নিতে পারছি না। পাশাপাশি ওই বিজেপি নেতা আরও বলেন, দলের বিরুদ্ধে আমাদের কোনও ক্ষোভ নেই। কিন্তু, নিজের পদের ক্ষমতা অপব্যবহার করে যে নেতা দল বিরোধী কাজ করছেন, আমাদের প্রতিবাদ মূলত তাঁর বিরুদ্ধেই।
যদিও এবিষয়ে বিমানবাবু বলেন, আমাদের দলের মধ্যে আদি নব্য বলে কিছু নেই। যাঁরা এধরনের কথা বলছেন, প্রকৃত অর্থেই তাঁরা আমাদের দলের কোনও কর্মী নন। দলের ভাবমূর্তি খারাপ করার জন্যই এক শ্রেণীর মানুষ এই ধরনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এসব বিষয়ে মাথা ঘামাতে চাই না।
এদিকে, জেলার সাংগঠনিক কমিটি গঠন নিয়েও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতারা। তাঁরা বলেন, বর্তমানে ওই কমিটিতে যাঁদের রাখা হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই অন্য দল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। যাঁরা পুরনো দিনের বিজেপির একনিষ্ঠ কর্মী তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যে কারণে জেলা সাংগঠনিক কমিটির অনুকরণে বিজেপি বাঁচাও কমিটির পক্ষ থেকে ওই একই কায়দায় অপর একটি জেলা সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। আগামীদিনে বিজেপি বাঁচাও কমিটির মাধ্যমে প্রতিটি মণ্ডল ও বুথ স্তরে বিক্ষুব্ধ বিজেপিরা কমিটি গঠন করবে।
এক বিজেপি নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিমানবাবুর বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের বিষয় নিয়ে স্থানীয় একটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। অথচ তারপরও বিমানবাবু কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এর ফলে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, রটনার কিছুটা ঘটনা বটে। আমরা চাই, বিমানবাবু আগে নিজেকে স্বচ্ছ প্রমাণ করুন। তারপর তিনি পদে ফিরে আসুন।
এদিকে, পুরভোটের আগে কোন্দলের কারণে আরামবাগ পুরসভা এলাকায় বিজেপির দলীয় কর্মসূচি এক প্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পুরনির্বাচনে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে দলীয় নির্দেশিকা না পাওয়ায় নিচুস্তরের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নতুন করে অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। যদিও জেলা নেতৃত্ব জানিয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পর পুরভোটের প্রচার জোর কদমে শুরু করা হবে।