গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
২০০৯ সালে তিনি যখন কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হন সেই সময় এলাকার মানুষ তাঁকে চিনতেন একজন বিখ্যাত অভিনেতা হিসাবে। আলিপুর বিধানসভার দু’বারের বিধায়ক থাকলেও তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানের কথা তখনও বাসিন্দারা তেমন জানতেন না। ২০০৯ সালে ভোটে দাঁড়ানোর পর থেকে কৃষ্ণনগরে খোকা বসুর বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। সংসদ সদস্যের মেয়াদের শেষদিন অবধি তিনি এই বাড়িকেই নিজের বাড়ি ভেবেছিলেন।
খোকা বসু বলেন, ২০০৯ সালে প্রথম যেদিন তিনি আমার বাড়িতে এলেন ঘর ভাড়া নেওয়ার জন্য সেদিন থেকেই ওঁর প্রতি আমার ভালোবাসা বাড়তে থাকে। আজ সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর আমাকে বাকরুদ্ধ করে দেয়। খবর শোনার পর মনে হল আমি আমার ভাইকে হারালাম। তিনি বলেন, তাপস পালকে অনেকে বাড়ি পরিবর্তন করার কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি বলতেন খোকাদার বাড়িতে থেকে আমি যতবার ভোটে দাঁড়াব ততবার জিতব। তাপস পাল বাড়ি থেকে কোথাও বের হওয়ার আগে আমাকে প্রণাম করে আশীর্বাদ নিয়ে বের হতন। পাড়ার ছেলেমেয়ে সকলকে খুব ভালোবাসতেন। তাঁর মৃত্যুতে আমাদের পাড়ার সকলে খুব কষ্ট পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তাপস পাল খেতে খুব ভালোবাসতেন। প্রতিদিন নানা রকম রান্না করে দিতে বলতেন। কোনও দিন দেশি মুরগির মধ্যে কাজু কিসমিস, আবার কোনওদিন শুধু ডাল ভাত খেতে চাইতেন। তিনি খুব আড্ডা দিতে ভালোবাসতেন। তাঁর অভিনয় আমাদের মুগ্ধ করেছিল। তিনি রাজনৈতিকভাবে ভালো জায়গায় ছিলেন। তিনি দু’বার কৃষ্ণনগর থেকে জিতে এলাকার অনেক উন্নয়নের কাজ করেছিলেন। চোখের কোণে জল নিয়ে তিনি বলেন, তাঁর মৃত্যু আমার কাছে স্বজন হারানো।
তাপস পালকে মাঝে মাঝে ফিজিওথেরাপি করতেন প্রদীপ মজুমদার। তিনি বলেন, খোকাদাকে দিয়ে আমাকে ডেকে পাঠাতেন। গিয়ে অনেক গল্প করতেন। তিনি খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবর আমাদের কাছে দুঃখজনক। নৃত্য শিল্পী তনুকা মৈত্র বলেন, তিনি শিল্পী হিসাবে শিল্পকে সম্মান দিতেন। তিনি মানুষের প্রচুর উপকার করেছেন। কিন্তু একটা ভালো মানুষ একটা খারাপ কথার জন্য সকলের কাছে খারাপ হয়ে গিয়েছেন। তবু বলি, ওঁর মতো ভালো উপকারি মানুষের মৃত্যু আমাদের ভাষা কেড়ে নিয়েছে।
এদিকে, কৃষ্ণনগরের সংসদ সদস্য তাপস পালের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই নাকাশিপাড়ার চৌমুহা গ্রামও শোকস্তব্ধ। একসময় সংসদ সদস্য থাকাকালীন এই চৌমুহা গ্রামে সিপিএম কর্মীদের উদ্দেশে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। যা নিয়ে রাজ্যে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তারপর থেকেই অভিনেতা সংসদ সদস্য তাপস পালের নামের সঙ্গে চৌমুহা গ্রামের একটা যোগসূত্র তৈরি হয়। সেই গ্রাম এখন সমস্ত বিতর্ক ভুলে তাপস পালের মৃত্যুতে শোকাহত। স্থানীয় বাসিন্দা মফিজুর রহমান ও কামাল মল্লিক বলেন, তাপস পালের মৃত্যুর আমাদের গ্রমের সবাই দুঃখপ্রকাশ করেছে। গ্রামের সমস্ত মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। প্রথমবার কৃষ্ণনগরের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বার পুনরায় যখন নির্বাচিত হন আরও অধিক ভোটে জয়লাভ করেন। গ্রামে বেশ কয়েকবার এসেছিলেন। নাকাশিপাড়া তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অশোক দত্ত বলেন, তাপস পাল দু’বারের সংসদ সদস্য ছিলেন। ওঁর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। দলীয় কর্মীদের সকলের সঙ্গেই সুসম্পর্ক ছিল। চৌমুহা বিতর্কিত মন্তব্য সেই সময়কার রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপরে বলে ফেলেছিলেন। তবে আমাদের এলাকার মানুষ সমস্ত কিছু ভুলে ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করছে। কালীগঞ্জ তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, কালীগঞ্জের সঙ্গে তাপস পালের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। তেহট্টের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, ২০০৯ সালে তাপস পাল যখন প্রথম ভোটে দাঁড়ান তখন আমি তাঁর চিফ ইলেকশন এজেন্ট ছিলাম। ২০১৪ সালে ছিলাম জেলা সভাপতি। তিনি দু’বারের সংসদ সদস্য হওয়ায় হাতের তালুর মতো এলাকা চিনতেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে খুব সহজে মিশতেন। তিনি সাতটি বিধানসভা এলাকাতেই প্রচুর উন্নয়ন করেছেন। তাঁর মৃত্যু আমাদের কাছে শোকের। এদিন কৃষ্ণনগরের পোস্ট অফিস মোড়ে তাপস পালের স্মরণে শোকজ্ঞাপন করে যুব তৃণমূল কংগ্রেস।