পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে এলাকার নাম দেবশালা হলেও রাজগড় নামে এখনও পরিচিত ওই এলাকা। অষ্টাদশ শতকে বর্ধমান রাজাদের অন্দরমহল ছিল ওই এলাকায়। এখনও অন্দরমহলের ভগ্নাংশ রয়েছে। সেই সময় জাতপাত নিয়ে বিভেদের লড়াই শুরু হয় রাজগড়ে। রাজগড়ের দুর্গে রাজার আত্মীয় স্বজনরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। রাজবাড়ির মেয়েদের পাহারা দিত লেঠেলরা। সেখানে ছিলেন রূপবতী রাজকন্যাও। দেবশালা গ্রামের গোপ সম্প্রদায়ের এক রাখাল কিশোর রাজবাড়িতে দুধ দিতে যেত। তখনই রাজকন্যার সঙ্গে গোপকিশোরের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। গোপকিশোর শাল-পিয়ালের জঙ্গলে গোরু চড়াত আর বাঁশি বাজাত। বাঁশির সুরে রাজকন্যা গভীর প্রেমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। গোপকিশোরের রাজবাড়িতে যাতায়াত বাড়তে থাকে। রাজকন্যার সঙ্গে গল্পও করত সে। রাজ পরিবার ও এলাকাবাসী তাদের দু’জনের প্রেমের সম্পর্কের আঁচ পেতে থাকে।
রাজার কাছেও সেই খবর যায়। সেই সময় জাতপাত নিয়ে গোলমাল চলছিল রাজগড়ে। চিন্তিত রাজা গোপকিশোরের রাজবাড়িতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেন। সেই সময় হাঙ্গামাকারীদের তাণ্ডবে রাজবাড়ি সহ রাজগড়ের সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। সেই পরিস্থিতিতে রাজা জানতে পারেন রাজকন্যাকে শত্রুপক্ষ উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছে। রাজ পরিবারের লোকজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিন্তু শত্রুপক্ষের আক্রমণের সুযোগ নিয়ে রাজকন্যা লুকিয়ে চলে আসে শাল পিয়ালের ঘন জঙ্গলে গোপকিশোরের কাছে। রাজকন্যার খোঁজ পেয়ে যান রাজা। রাজপ্রহরীরা রাজকন্যা ও গোপকিশোরকে একসঙ্গে ধরে ফেলে। ওই জঙ্গলে রাজকন্যার সমস্ত অনুরোধ ও আর্তনাদ উপেক্ষা করে তাঁরই সামনে গোপকিশোরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়। দেহ পুঁতে দেওয়া হয় জঙ্গলের রাস্তায়। মর্মান্তিক ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ে রাজগড়ে।
প্রেমিককে হারিয়ে কয়েক বছরের মধ্যেই রাজকন্যা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরবর্তীকালে মারা যান। রাজকন্যার মৃতদেহ ওই জঙ্গলে গোপকিশোরের সমাধির পাশে সমাধিস্থ করা হয়। জঙ্গলের এক অংশের নামকরণ হয়ে যায় নাগরপোঁতার জঙ্গল। এরপর থেকেই ওই এলাকার মানুষ তাঁদের ভালোবাসার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে কচি পাতা দেন। এখনও রীতি মেনে সারা বছর পথচলতি মানুষ ওই সমাধিতে কচিপাতা দিয়ে যান। গ্রামের বৃদ্ধা বিজলা রুইদাস ও জালালউদ্দিন শেখ বলেন, এই ঘটনা দেবশালা এলাকা সহ কাঁকসা অঞ্চলের সমস্ত মানুষ জানেন। ভ্যালেন্টাইন্স ডে’তে নতুন প্রজন্মের যুবক-যুবতীরা এই সমাধিতে কচিপাতা দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়াও সব ধর্মের মানুষই ওই প্রেমিক-প্রেমিকার সমাধিস্থলে সারা বছর কচিপাতা দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রণাম করেন।
দেবশালা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামল বক্সি বলেন, আজও ওই রাজকন্যা ও গোপকিশোরের সমাধিতে কচিপাতা দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা সকল মানুষই ওই সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান।