বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
ইলামবাজার থানার জয়দেব কেন্দুলি পঞ্চায়েতের সুগড় গ্রাম বসন্ত পঞ্চমী তিথিতে বাগদেবীর আরাধনায় আকর্ষণীয়ভাবে সেজে ওঠে। সুগড় গ্রামে অন্যান্য সব পাড়ায় মা সরস্বতী পূজিত হলেও বাগবাদিনী ঠাকুরানির পুজোকে ঘিরেই মেতে ওঠেন বাসিন্দারা। সুগড় গ্রামের ঘোষ পরিবারের জমিদারি রীতি অনুযায়ী এই পুজো প্রায় ৩০০বছর প্রাচীন।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পুজোর প্রবর্তন করেন ঘোষ পরিবারের পূর্বপুরুষ রোহিনীকান্ত ঘোষ। ঘোষ পরিবারের পাশাপাশি দৌহিত্র সূত্রে পুজোর উপর সিংহ পরিবারের রয়েছে বিশেষ শরিকিয়ানা। তবে, প্রাচীনকাল থেকে একইভাবে ঐতিহ্য ও রীতি মেনে এই পুজো হয়ে আসছে। এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ প্রতিমা। কারণ এখানে মা হংসবাহিনী নন। এখানে মৃণ্ময়ী প্রতিমায় একচালির মধ্যে রয়েছেন মা সরস্বতী, তার সঙ্গে ডান দিকে রয়েছেন ভগবতী ও বাম দিকে রয়েছেন লক্ষ্মী। তার সঙ্গেই দু’দিকে রয়েছে জয়া-বিজয়া ও রাগ-রাগিণী।
পরিবার সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এই পুজোয় ঢাকের পরিবর্তে ঢোল ও সানাই বাজিয়ে মায়ের আরাধনা করা হয়। পঞ্চমীর দিন ভোরবেলায় শোভাযাত্রা সহকারে গ্রামের প্রায় সব বাসিন্দা মিলে ঘট ভরতে যান পুকুরে। বাগবাদিনী ঠাকুরানির মন্দিরের পাশেই রয়েছে নারায়ণ মন্দির। পুজোর এই চারদিন শালগ্রাম শিলার নারায়ণ মৃণ্ময়ী মূর্তির পাশে অধিষ্ঠিত হয়ে পূজিত হন। পুজোয় বিভিন্ন ধরনের ফলমূলের পাশাপাশি ৩০কেজি আতপ চাল নিবেদন করা হয়। গ্রামের এই পুজো ঘিরে মানুষজনের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। চারদিনের পুজো উপলক্ষে গ্রামে ছোটখাট মেলা বসে ও দু’দিনব্যাপী যাত্রা অনুষ্ঠান হয়। তবে, সেই যাত্রা অনুষ্ঠানে কোনও শিল্পী আসেন না। গ্রামের বাসিন্দারা ও ঘোষ পরিবারের সদস্যরাই যাত্রা অনুষ্ঠানে অভিনয় করেন। দুর্গোৎসবের মতো সুগড় ছাড়াও আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দারা পঞ্চমী তিথিতে এই পুজোর জন্য একইভাবে অধীর আগ্রহে সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন।
পুজোয় যেমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তেমনি প্রতিমা নিরঞ্জনের ক্ষেত্রেও বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। চারদিনের পুজো শেষে বাগবাদিনী ঠাকুরানির প্রতিমা পরিবারের সদস্যদের কাঁধে চাপিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ করে নিরঞ্জন করা হয়। পাশাপাশি প্রতিমা নিরঞ্জনের পর দুর্গাপুজোর বিজয়ার মতো জিলিপি দিয়ে মিষ্টিমুখ করা হয়।
ঘোষ পরিবারের সদস্য অরিত্র ঘোষ বলেন, অন্যান্য জায়গার সরস্বতী পুজোর থেকে আমাদের পরিবারের পুজো অনেকটাই আলাদা। সারা গ্রাম আমাদের সঙ্গে এই আনন্দে সম্মিলিত হয়। এই ক’দিন দুর্গাপুজোর মতো উৎসবের আলোয় সেজে ওঠে সুগড় গ্রাম।