রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
মহিশীলা কলোনি পুরাতন আসানসোলের অন্যতম বর্ধিষ্ণু এলাকা। পাশেই আসানসোল জেলা হাসপাতাল, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্কুল। ঘিঞ্জি জনবহুল এলাকা হিসেবে এটি পরিচিত। এখানকার আরএকটি পরিচয় এটি এই এলাকার কুমোরটুলি। এমনিতেই এলাকায় ভিড় থাকে। মঙ্গলবার সরস্বতী পুজোর আগেরদিন ঠাকুর কিনতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসেছিলেন। এর পাশেই রয়েছে ইসমাইল গুরুনানকপল্লি এলাকা। উৎসবের আবহে ওইদিন সন্ধ্যায় জমজমাট ভিড় ছিল এলাকায়। কিন্তু হঠাৎ জনজীবনের সুর কাটে বাঁকুড়া থেকে আসা বুনো দাঁতালের তাণ্ডবে। বনকর্মীদের তাড়া খেয়ে দিকভ্রষ্ট হয়ে সাড়ে ৬টা নাগাদ শহরের এই এলাকা ঢুকে পড়ে সে। গুরুনানক এলাকার চার নম্বর গলির কাছে এক বৃদ্ধকে পিষে মেরে সরস্বতী পুজোর প্যান্ডেল ভেঙে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়। মুহূর্তে খবর ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। মোড়ে জটলা শুরু হয়ে যায়। এক শ্রেণীর অতি উৎসাহী মানুষ হাতির পিছনে ছুটতে শুরু করেন। বাকিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বনদপ্তর বহু চেষ্টা করে মহিশীলা কলোনির সানভিউ পার্ক এলাকায় তাকে গুলি করে ঘুম পাড়িয়ে মাঝরাতে লরিতে চাপিয়ে পুরুলিয়ার জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে আসে। কিন্তু এই কয়েক ঘণ্টা শহরের হাতির উপস্থিতিতে বনদপ্তর ও পুলিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কালাঝরিয়া থেকে হাতিটিকে তাড়িয়ে নদী পার করে বাঁকুড়ায় পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। পুলিসকে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে বলে হুলা পার্টির সদস্যরা হাতি তাড়াতে শুরু করেন। কিন্তু মানুষের ভিড় ঠিকমতো নিয়ন্ত্রিত না হওয়ায় হাতি গতিপথ পরিবর্তন করে আসানসোল শহরের দিকে এগতে শুরু করে। এতেই বাধে বিপত্তি। তবে বনদপ্তরের বিরুদ্ধেও অভিযোগের আঙুল উঠেছে। ভোরে মহিলাকে খুন করলেও হাতি তাড়াতে সন্ধ্যা পর্যন্ত কেন সময় নিতে হল বনদপ্তরকে। কেন জেলার হুলা পার্টির টিম নেই, কেনই বা বাঁকুড়া বা বর্ধমানের উপর তাদের ভরসা করতে হয়, সেসব নিয়েও মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বনদপ্তর ও পুলিস সক্রিয় হলে দ্বিতীয় মৃত্যু হয়তো আটকানো যেত।
দাক্ষিণপূর্ব চক্রের মুখ্য বনপাল কল্যাণ দাস বলেন, পশ্চিম বর্ধমান হাতি উপদ্রুত জেলা নয়। তাই এই সংক্রান্ত পরিকাঠামো ছিল না। তবু বিভিন্ন জেলা থেকে টিম দ্রুত এসেছিল। দু’জনের মৃত্যু অবশ্যই দুঃখজনক। কিন্তু শহরের মধ্যস্থল থেকে বহু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও হাতিটিকে যে সুস্থভাবে উদ্ধার করে অন্য জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। সেটাও কৃতিত্বের।
অন্যদিকে হাতির হানায় গুরুনানাকপল্লিতে বৃদ্ধের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবারের দাবি, বাড়ির পাশে সরস্বতী পুজোর প্যান্ডেল হচ্ছিল। ছোট ছেলেমেয়েরা সেখানে খেলা করছিল। তাদের বাঁচাতেই সেখানে ছুটে যান রামবাবু যাদব (৬২)। তবে শিশুদের প্রাণ বাঁচলেও নিজের প্রাণ বাঁচাতে পারেননি তিনি।
এদিকে, হাতির হানায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা প্রশাসনিক ত্রুটিকে সামনে এনেছে। এলাকায় গিয়ে জানা যায় বহু বাড়িতে শৌচালয় না থাকায় বাইরে শৌচকর্ম করতে হয়। ওইদিন সেইসময়ই হাতির আক্রমণের শিকার হন মৃত বৃদ্ধা। স্থানীয় বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দ্রুত পদক্ষেপ নিলে দ্বিতীয় মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হতো। কেন শৌচালয় হয়নি তা খোঁজ নিয়ে দেখব। আসানসোলের মহকুমা শাসক দেবজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, কেন শৌচালয় নেই তা খতিয়ে দেখা হবে।