বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
বিশ্বভারতীতে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। অনিশ্চয়তার মধ্যে পৌষমেলা আয়োজিত হলেও শেষ সময়ে তুমুল গণ্ডগোলের সৃষ্টি হয়। পৌষমেলা কেটে গেলে ফের সেখানে সিএএর সমর্থনে বিজেপির সংসদ সদস্য স্বপন দাশগুপ্তের লেকচার ঘিরে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়।
স্বপনবাবুর ওই লেকচার বয়কট করে বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরা তার প্রতিবাদে আন্দোলনে শামিল হন। এমনকী, ওইদিন স্বপনবাবু সহ উপাচার্য ও শ্রোতাদের আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখানো হয়। সেই পরিস্থিতির পর ফের বিশ্বভারতীর বিদ্যাভবন হস্টেলে ঢুকে ছাত্রদের মধ্যে মারামারির ঘটনা বিশ্বভারতীকে আরও অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। সেই ঘটনার জেরে বিশ্বভারতীর সাধারণ ছাত্রছাত্রী ঐক্য টানা কয়েকদিন করে বিক্ষোভ, মিছিল করেন। সেই আবহেই গত শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি ভিডিওকে ঘিরে উপাচার্যের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে।
জানা গিয়েছে, পৌষমেলার সময় ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার জেরে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ শান্তিনিকেতনে গত ৭জানুয়ারি সন্ধ্যায় একটি মোমবাতি মিছিল করে। সেই মিছিলে উপাচার্য সহ অন্যান্য আধিকারিক ও পডুয়ারা হাঁটেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় পাওয়া ওই ভিডিওতে যা দেখা ও শোনা গিয়েছে তা মারাত্মক বলেই মনে করছেন পড়ুয়ারা। ওই ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁরা পুলিসকে ওই ভিডিওটি তুলে দিয়েছেন। পুলিস জানিয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ওই ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী হাঁটছেন। তাঁর পাশে হাঁটছে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ ছাত্র বলে পরিচিত অচিন্ত্য বাগদি। সে আবার গত ১৫জানুয়ারি ক্যাম্পাসে মারধরের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত। বর্তমানে সে জেলে রয়েছে।
ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করা হয়নি। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সেখানে উপাচার্য বলছেন, আমাকে ছবিগুলো দিও। অচিন্ত্য সেই কথা শুনে বলেছে, আমি নাম সমেত সব পাঠিয়ে দেব আপনাকে। তখন উপাচার্য বলছেন, ওষুধ দিয়ে দাও। অচিন্ত্য বলছে, আপনার গ্রিন সিগন্যাল না পেলে আমি তো কিছু করতে পারি না। তারপর ফের উপাচার্য বলছেন, কাল একটু এসো। সাড়ে ৩টের সময় এসো। ওরা নিশ্চই বদমায়েশি করার চেষ্টা করবে। তোমাদের বাইকবাহিনী নিয়ে চলে এসো।
মোমবাতি মিছিল চলাকালীন সামনে কিছু বাইক আসছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তা নিয়ে ভিডিও-তে বলতে শোনা যাচ্ছে, ওই বাইকগুলো এদিকে যেন না ঢোকে। ওখানে আটকে দাও। তারপর কেউ একজন বলছেন, এক্ষুণি মেরে দিয়ে আসব ছেলে ক’টাকে।
এধরনের কথোপকথন ওই ভিডিও-তে শোনা ও দেখা গিয়েছে। এই মোমবাতি মিছিলের পরদিনই ছিল বিশ্বভারতীতে বিজেপির সংসদ সদস্য স্বপন দাশগুপ্তের লেকচার। যা ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্বভারতী।
এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর শান্তিনিকেতনজুড়ে ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়েছে। যদিও ভিডিও দেখে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেছেন, বিশ্বভারতীকে কলঙ্কিত ও উপাচার্যের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য চক্রান্ত করা হয়েছে। উপাচার্যের কাছে সব ছাত্রই সমান।
অন্যদিকে, বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রী ঐক্যের তরফে পড়ুয়া ফাল্গুনী পান শনিবার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার আমাদের কাছে ওই ভিডিও এসে পৌঁছয়। তারপর আমরা থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। যদিও পুলিসের তরফে আমরা রিসিভ কপি পাইনি। এদিন থানায় এসে সেব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, এনআরসি, সিএএ ও এনপিআরের যে বিরোধী আন্দোলন চলছে তাকে দমন করার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ বিজেপি, আরএসএসের তাঁবেদারি করছে। এছাড়া হস্টেলে যে আক্রমণ হয়েছে তা উপাচার্যের নির্দেশেই বলে ভিডিওতে প্রকাশ পেয়েছে। তাই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আগামী সোমবার মিছিল করা হবে।
শনিবার বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণবাবু বলেন, মিছিল করতেই পারে। কিন্তু, ক্যাম্পাসে কোনওরকম বিশৃঙ্খলা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ করতে দেবে না। যে ভিডিওটি দেখানো হচ্ছে সেটি ভুয়ো। ওই কণ্ঠস্বরটি উপাচার্যের নয়। তিনি আরও বলেন, উপাচার্য কাজে যোগ দেওয়ার পরই বিশ্বভারতীতে শুদ্ধিকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। তারজন্য যাদের স্বার্থে আঘাত লাগছে তারা বিশ্বভারতীকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার নিন্দা করছে। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে দেখা হবে, এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত।