বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
ভূ-স্বর্গ কাশ্মীরের আপেল বিখ্যাত। সাগরদিঘির বহু যুবক সেখানে দীর্ঘদিন ধরে আপেল চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। গত নভেম্বর মাসে সেখানেই জঙ্গিদের গুলিতে বাহালনগরের পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। বাকি শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোয় গ্রামে ফেরার হিড়িক পড়ে যায়। গত ডিসেম্বর মাসে জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাহালনগরে গিয়ে মৃত শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও সেইসঙ্গে আর্থিক সাহায্য করেন। পাশাপাশি বাকিদেরও নিজের এলাকায় কর্মসংস্থানের আশ্বাস দেন তিনি। এরপরই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাগরদিঘি ব্লকে আপেল চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
জেলা উদ্যানপালন বিভাগের টেকনিক্যাল অফিসার রতন রায় ও সাগরদিঘি ব্লকের টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট বিজয় পাসওয়ানকে আপেল চাষের প্রশিক্ষণের জন্য মিরাটে পাঠানো হয়। সেখানে এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণ শিবির থেকে গাছের পরিচর্যার খুঁটিনাটি শিখে আসেন তাঁরা। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন কাশ্মীর থেকে আপেল চাষের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসা শ্রমিকরা। রতনবাবু বলেন, সমতলে বছরে ২০০ঘণ্টা ১০ডিগ্রির নীচে তাপমাত্রা থাকলেই গাছে ফল আসবে। উপত্যকায় ১০০০ থেকে ১২০০ঘণ্টা শূন্য বা হিমাঙ্কের নীচে তাপমাত্রার দরকার হয়। গুণমানের কিছুটা ফারাক হতে পারে, তবে ফলন নিয়ে কোনও অনিশ্চয়তা নেই।
প্রথম দফায় সাগরদিঘি ব্লকের চাঁদপাড়া, কাবিলপুর, সাগরদিঘি ও ধুমারপাহাড়ে তিন হেক্টর জমিত আপেল চাষ শুরু করা হয়েছে। এরমধ্যে সাগরদিঘি ও ধুমারপাহাড়ে সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যগে চাষ করা হয়েছে। এছাড়া জেলার বেলডাঙা-১ ব্লকের সারগাছিতেও অল্প পরিমাণ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে আপেল চাষ শুরু করা হয়েছে। আপেল চাষি মানোয়ার হোসেন বলেন, জমির আগাছা তোলার পর ভালোভাবে চাষ দেওয়া হয়েছে। পরে গোবর সার, ধানের গুঁড়ো বা তুষ, গুড় ও একপ্রকার কেমিক্যালের মিশ্রণ দিয়ে জমি তৈরি করা হয়। হেক্টর প্রতি ৪০০চারাগাছ রোপণ করা হয়েছে। এখন দুই থেকে তিন অন্তর চারাগাছের গোড়ায় জল দিতে হচ্ছে। এছাড়া গাছের আশপাশের আগাছা উপড়ে ফেলা হচ্ছে।
শাখা কলমের মাধ্যমে ইতালিয়ান আন্না প্রজাতির মোট ১৪০০চারা আনা হয়েছিল। দু’চারটি বাদে সব গাছেই নতুন পাতা গজাতে শুরু করেছে। নতুন সবুজ পাতা গজাতেই উৎসাহিত চাষিরা। সাগরদিঘি কৃষি খামারে আপেল গাছে জল দিচ্ছিলেন আইনুর শেখ। তিনি বলেন, এতদিন জীবনের ঝুঁকি দিয়ে আমাদের ভিনরাজ্যে কাজের জন্য যেতে হতো। এবার আমাদের নামের সঙ্গে জুড়ে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকের তকমা ঘুচতে চলেছে।