কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
এদিন জেলায় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা ছিল সূতির কয়েকটি গ্রামে। র্যা ফ, কমব্যাট ফোর্স নামিয়ে পুলিস সেখানে কোনওরকমে পরিস্থিতি সামাল দেয়। জেলা পুলিসের শীর্ষ আধিকারিকরাও গ্রামগুলিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন। সূতি ছাড়াও লালগোলাতেও এদিন রুটমার্চ করেছে পুলিস। পুলিস জানিয়েছে, সকালের দিকে বিভিন্ন জায়গাতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন চলছিল। কিন্তু, বেলা গড়াতেই পরিস্থিতি বদলে যায়। বিভিন্ন স্টেশনে উত্তেজিত জনতা গিয়ে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করতে থাকে। তবে, হিংসা যাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় না ছড়িয়ে পড়ে সেজন্য বিকেল থেকেই জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মীনা বলেন, আশা করি, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সবাই সহযোগিতা করবেন। আপাতত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকছে।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল বলেন, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর করে কখনও সমস্যার সমাধান হতে পারে না। মুর্শিদাবাদের জেলা ইমাম নিজামউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, যারা ভাঙচুর বা হামলা করছে, তাদের সমর্থন করি না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হোক।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন রেজিনগর ও মণিগ্রাম স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। টিকিট কাউন্টারে লুট চলে। স্টেশনগুলিতে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এদিন বাইরে থেকে আরপিএফ আনা হয়েছিল। কিন্তু, উত্তেজিত জনতার সামনে তারা অসহায় ছিল। রেজিনগর এবং মণিগ্রামে আরপিএফ কর্মীদের মারধর করা হয়। একজনের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। দু’টি স্টেশন চত্বরে আরপিএফ কর্মীদের গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা কোনওরকমে পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচান। শনিবার রাতে বহরমপুরের সারগাছি স্টেশনেও তাণ্ডব চালানো হয়েছিল। সেখানেও টিকিট কাউন্টার সহ একাধিক রুমে ভাঙচুর এবং লুট হয়।
এদিন বহরমপুর সহ একাধিক স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, রেলকর্মীরা আতঙ্কে রয়েছেন। এক কর্মী বলেন, আমাদের কোনও নিরাপত্তা নেই। কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না। বহরমপুর স্টেশনে ট্রেন ধরার জন্য এসে হুগলির চন্দননগরের জয়ন্তী মাজি বলেন, মেয়ের বাড়ি থেকে বাড়ি ফেরার জন্য স্টেশনে এসে শুনলাম, ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হিংসাত্মক আন্দোলন করে মানুষকে দুর্ভোগে ফেলা উচিত নয়।
পুলিস সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এদিন সাগরদিঘির বারালা স্টেশনেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। সাগরদিঘিতে প্রায় দু’ঘণ্টা টায়ার জ্বালিয়ে ৩৪নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। রাস্তার দু’ধারে বহু যানবাহন দাঁড়িয়ে পড়ে। তবে বেলডাঙা, বহরমপুর, রঘুনাথগঞ্জে আতঙ্কে রাস্তায় লোকজনের সংখ্যা কম ছিল।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দুপুর থেকেই মুর্শিদাবাদ উত্তাল হয়ে ওঠে। বেলডাঙা এবং কৃষ্ণপুর স্টেশন তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। কৃষ্ণপুরে ট্রেন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। বেলডাঙায় রেললাইন উপড়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। টিকিট কাউন্টার এবং স্টেশন মাস্টারের ঘর ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। লালগোলা-বেলডাঙা রুটে কবে থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে তা বলতে পারছেন না রেলকর্তারা।
এক আধিকারিক বলেন, বেলডাঙায় রেলের ট্র্যাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্টেশনে কম্পিউটার সহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।
রেজিনগর স্টেশনে টিকিট কাউন্টার সহ অন্যান্য রুমে তাণ্ডব চালানো হয়। স্টেশন থেকে হামলাকারীরা রেলের বিভিন্ন সামগ্রীও নিয়ে চলে গিয়েছে। জেলা পুলিসের গোয়েন্দা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী দিনেও বিক্ষোভকারীদের বেশকিছু কর্মসূচি রয়েছে। জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, সংযত হওয়ার জন্য বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিসের একাংশ মনে করছে, হামলার পিছনে বাইরের কোনও শক্তির মদত রয়েছে। অনেকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ করতে চাইলেও পথে নামার পর আন্দোলনের রাশ আর তাদের হাতে থাকছে। হঠাৎ করেই একটা দল স্টেশন বা টোলপ্লাজা সহ সরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাচ্ছে। এমনকী, পরিবহণ দপ্তরের বাসে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করতে পিছুপা হচ্ছে না। বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে আতঙ্কিত চালক এবং যাত্রীরা।